ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে পোশাক মালিকরা উদ্বিগ্ন নন

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০২২

এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে পোশাক মালিকরা উদ্বিগ্ন নন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতাানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হয়ে যাওয়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন। কারণ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিজিএমইএ সরকার ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। দক্ষতা উন্নয়ন, বিনিয়োগ বাড়ানো, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে কোটা ও শুল্ক মুক্ত সুবিধাহীন বিশ^বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের টিকে থাকা নিয়ে আপাতত কোন সংশয় দেখা যাচ্ছে না। বুধবার দুপুরে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত সংলাপটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। এ সময় সংগঠনের সহ-সভাপতি ও বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চীফ শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে তাদের কৌশল হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিকাল অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা নেয়া। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৬ সালের পরে যে বাড়তি তিন বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় রফতানির সুযোগ দেবে, আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো। বিজিএমইএ ইইউর কাছে ১০ বছরের জন্য এই সুবিধা চায়। এরপরে বিজিএমইএ ইইউর সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা করবে। তবে পোশাক মালিকরা চান এই সময়ের মধ্যে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করবে। তিনি বলেন, বিজিএমইএ সব সময় পুরো খাতের উন্নয়নে কাজ করেছে, এখনও করে চলেছে। এই সংগঠনটিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সকলেই পোশাক শিল্পের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তিনিও উত্তরসূরিদের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় পোশাক খাতের এসএমই প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন ধরনের চার্জ ও ফিস কমানো হয়েছে। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের কাজ চলছে। কৃত্রিম তন্তুর পোশাক যাতে দেশে বেশি তৈরি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। এক কথায় বিজিএমএর ভূমিকা ভবিষ্যতমুখী করার চেষ্টা চলছে। প্রারম্ভিক বক্তব্যের পরে বিজিএমইএ সভাপতির কাছে উপস্থিত সাংবাদিকরা এ খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা, করোনা মহামারী এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহত্তম এই বাজারে তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পেত না। এখনও পাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো পোশাক মালিকরা ও সরকার বাস্তবায়ন করেছে। কমপ্লায়েন্স বা নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এদেশের উদ্যোক্তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। বিশে^র নিরাপদ কারখানা এখন বাংলাদেশে। ১৫৩টি গ্রীন ফ্যাক্টরি রয়েছে দেশে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের কাজটি করেছেন। এখন জিএসপি দেয়া না দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়। তিনি বলেন, দেশটির জিএসপি সুবিধা দেয়ার সঙ্গে শুধু শর্ত বাস্তবায়ন নয়, রাজনীতিও জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স ২০ থেকে ৩০ বছর আগে নেয়া। তিন দশক আগে বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য তৈরি করত এখন তার চেয়ে ভিন্ন ও উন্নত পণ্য তৈরি করছে। ফলে পুরনো বন্ড লাইসেন্সে অনেক পণ্যেরই উল্লেখ নেই, কিন্তু ওই লাইসেন্সধারী কারখানার নতুন পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। তিনি বলেন, লাইসেন্সে উল্লেখ না থাকলেও ব্যবহারিক ঘোষণাপত্রে (ইউডি) তা থাকছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনেক সময় পণ্য ছাড় করছে না। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে আগামী সপ্তায় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন যে, ব্যবসায়ীরা নতুন বাজার, পণ্য, ডিজাইনে যাচ্ছেন না। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ কোথায়। কাস্টমসের জটিলতার মতো অনেক জটিলতার পেছনে ব্যবসায়ীদের দৌড়াতে হয়। ফলে এ ধরনের বিধিবিধান সহজ করে দিলে ব্যবসা সহজ হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রকৃত পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রকাশ করা হবে। সাব কন্ট্রাক্টের বিষয়ে বিজিএমইএ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আগামীতেও থাকবে বলে তিনি জানান। কারণ হিসেবে বলেন, তাজরীন ফ্যাশনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি তারা চান না। অবশ্যই সাব কন্ট্রাক্ট হবে, তবে তা একই ক্রেতার পণ্য উৎপাদন করে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবং ক্রেতার সম্মতি সাপেক্ষে। যেসব কারখানা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য হয়নি, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক করার নিয়ম দাবি করেন। এছাড়া পোশাক কারখানা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে জেলা পর্যায়ে নেয়ারও চেষ্টা চলছে। এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হচ্ছে। পোশাকের ন্যূনতম দর বিষয়ে তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথভাবে একটি কমিটি করেছে। এ কাজটি হবে, তবে সময় লাগবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব কারখানাকে ব্যাংক ঋণ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান তিনি।
×