ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিক্রিয়া

আবরার হত্যা ॥ মেধাবী সন্তানদের খুনি বানাল কারা?

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

আবরার হত্যা ॥ মেধাবী সন্তানদের খুনি বানাল কারা?

অনলাইন ডেস্ক ॥ বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার পর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তাদের স্বজনরা। পুলিশ আর গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় ঠেলে প্রিজনভ্যানের অনেকটা সামনে এগিয়ে যান দণ্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ইসতিয়াক আহমেদ মুন্নার মা কুলসুমা বেগম শেলি। বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, 'মুন্না আমার মেধাবী সন্তান। বুয়েটে পড়ালেখা শেষ করে ওর বড় স্বপ্ন ছিল। বারবার নিষেধ করলেও হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগে নাম লিখিয়েছিল। ও তো খুনি নয়।' কুলসুমার প্রশ্ন- তার নির্দোষ মেধাবী সন্তানকে খুনি বানাল কারা? প্রায় অভিন্ন প্রশ্ন দণ্ড পাওয়া আসামিদের স্বজনের। তারা বলছিলেন, সবাই মেধার স্বাক্ষর রেখেই বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল। তারা কেউ পেশাদার অপরাধী বা খুনি নয়। পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাদের এমন পরিণতি। রায় শুনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি অমিত সাহার মা দেবী রানী সাহা নিজের অসহায়ত্বই প্রকাশ করলেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে দাবি করলেন, তার ছেলে ঘটনার সময় ছিল না। সে নেত্রকোনার বাড়িতে ছিল। ছাত্রলীগ করার অপরাধেই তার ছেলেকে জেলে জীবন কাটাতে হবে? দেবী রানীর ভাষ্য, গণমাধ্যমের চাপে তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে জড়ানো হয়েছে। সে নাকি শুধু মেসেঞ্জারে কথা বলেছে, এ জন্য যাবজ্জীবন! মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের বাবা রবিউল ইসলামও ভিড় ঠেলে পৌঁছতে পেরেছিলেন প্রিজনভ্যানের কাছে। লোহার রডের ফাঁক দিয়ে বাবা-ছেলে কথা বলেন। তিনি ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকেন, 'সবই মিথ্যা। তুমি রাজশাহী ছিলে। তুমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে দেখবেন।' ওই সময় সেখানে থাকা ফুপু-ফুপাকে উদ্দেশ করে মোর্শেদ বলেন, 'আব্বাকে দেইখেন।' রায়ের পর ক্ষোভ ঝরল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মুহতাসিম ফুয়াদের বাবার কণ্ঠে। নিজের নাম না জানিয়ে বললেন, বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও তার ছেলে কখনও কোনো অপরাধে জড়িত ছিল না। রাজনীতির কারণেই তার সন্তানের শাস্তি হলো। আর কোনো বাবা-মা যেন তাদের সন্তানদের রাজনীতিতে যুক্ত হতে না দেন, সেই অনুরোধ জানান তিনি। আদালত প্রাঙ্গণেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুয়াজ আবু হুরায়রার এক স্বজন ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, 'মুয়াজ আবরারকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। টাকা খরচ করে ওষুধ, স্যালাইন কিনেছে। তাকেই যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হলো!' দণ্ড পাওয়া অন্য এক আসামির স্বজন নিজের পরিচয় না দিয়ে বলেন, আপনারাও তো ছাত্রাবস্থায় নিশ্চয়ই হলে ছিলেন। হলে থাকলে তো রাজনৈতিক পরিচয় লাগে। সেই রাজনৈতিক পরিচয়ই সবার কাল হয়েছে। তারা তো খুনি নয়। মেধাবী এই সন্তানেরা তো বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে এসেছিল। কারা তাদের খুনি বানাল, এগুলো বের করা উচিত।
×