ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনআই বুলবুল

কেমন চলছে এফএম রেডিও

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

কেমন চলছে এফএম রেডিও

বাংলাদেশের এফএম রেডিও স্টেশনের বাণিজ্যিক সম্প্রচারের এক যুগ পেরিয়ে গেছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী এফএম রেডিও স্টেশন হিসেবে রেডিও টুডে যাত্রা শুরু করে। এক যুগে এফএম রেডিও স্টেশনের সংখ্যা এখন প্রায় ৩০টিরও বেশি। বাংলাদেশ বেতারের বাইরে এ চ্যানেলগুলো শুরুর দিকে শ্রোতাদের মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি করে। বিনোদনের নানা রকম ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চ্যানেলগুলো শ্রোতাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটির স্টুডেন্টদের মধ্যে এফএম বিনোদের মাধ্যম হিসেবে দারুণ একটা জায়গা করে নেয়। একইসঙ্গে চ্যানেলগুলোর আরজেদের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়তে থাকে। যদিও আরজেদের বাংলিশ ভাষার কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচানার মুখে পড়তে হয়েছে। এফএম রেডিও চ্যানেল থেকে বেশ কয়েকজন আরজে তারকাখ্যাতিও পেয়েছেন। কিন্তু এই এক যুগে বদলে গেছে অনেক হিসাব-নিকাশ। বেশ কয়েকটি চ্যানেল পারেনি ধরে রাখতে তাদের সেই জনপ্রিয়তা। এর মধ্যে কিছু চ্যানেল তাদের পরিধিও কমিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। আবার কয়েকটি আছে বন্ধের পথে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশে এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর ভবিষ্যত কী? যে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এ চ্যানেলগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেখানে কেন তারা পিছিয়ে পড়েছে? এ প্রসঙ্গে রেডিও টুডের সিনিয়র আরজে এবং হেড অব প্রোগ্রাম জহিরুল ইসলাম টুটুল বলেন, যখন নতুন কোন একটি মাধ্যম আসে তখন সবার জানার আগ্রহ থাকে। এছাড়া এফএমের শুরুর দিকে এত প্রতিযোগিতা ছিল না। একইসঙ্গে বেতারের একঘেয়েমি অনুষ্ঠানের কারণে শ্রোতারা এফএমের নতুনত্বকে সহজে গ্রহণ করে। রাত জাগা ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি এটি টিনএজদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু এই সময়ে এসে এফএম চ্যানেল নিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে সেই অগের উত্তেজনা নেই এটি সত্যি। তবে শ্রোতার সংখ্যা কমেনি বলে আমি মনে করি। কারণ এখন টিনএজদের বাইরে বিভিন্ন বয়সের শ্রোতারও এফএম শুনছেন। এফএমের ভবিষ্যত বলতে অনেকে হয়ত ভাবেন এটি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। এটি ঠিক না। কোন কারণে একটি চ্যানেল বন্ধ হলে আরেকটি আসবে। দিন দিন এটির সংখ্যাও বাড়বে। এর মধ্যে সেই চ্যানেলগুলো শক্ত জায়গা করে নেবে যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েট করতে পারবে। এছাড়া ভবিষ্যতে চ্যানেলগুলোর ভীত শক্ত করার জন্য প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে যেতে হবে। এবিসি রেডিওর নির্বাহী প্রযোজক সাগর শাহরিয়ার বলেন, এফএম রেডিওর শুরু দিকে মানুষের হাতে এ্যান্ড্রয়েড ফোনের সংখ্যা কম ছিল। এখন মানুষ এক ফোনে অনেক কিছু পাচ্ছে। যার কারণে শুধু শ্রোতারা আর এফএম চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীল নয় বিনোদনের জন্য। সত্যি বলতে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্রিকুয়েন্সি এগিয়ে যেতে পারেনি। যার কারণে আগের চেয়ে এফএমের শ্রোতা এখন কম। এদিকে শ্রোতারা এখন শুধু শুনতে চায় না। একইসঙ্গে দেখতেও চায়। রেডিওর ক্ষেত্রে এ দেখানোটা সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে শ্রোতাদের আগ্রহ আগের থেকে কমের এটিও একটি কারণ। বর্তমান সময়ে এফএমের শ্রোতা কেমন ও এর ভবিষ্যত কী? এ প্রসঙ্গে জাগো এফএমের অপরেশন হেড উদয় চৌধুরী বলেন, এফএমের সঙ্গে এখন আরও অনেকগুলো ডিজিটাল প্লাটফর্ম যোগ হয়েছে। যার কারণে শ্রোতা ভাগ হয়েছে কিন্তু কমেনি। আগে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এফএম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এখন বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফরমের কারণে অন্য বয়সের শ্রোতারাও এফএম শুনছেন। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান ফেসবুকে যাচ্ছে। কিছু অনুষ্ঠান ইউটিউবে যাচ্ছে। এসব অনুষ্ঠান সব শ্রেণীর দর্শকশ্রোতার কাছে পৌঁছায়। এছাড়া করোনার কারণে সারা বিশ্বে একটি প্রভাব পড়েছে। আমাদের এফএম চ্যানেলগুলোও বাদ পড়েনি। এদিকে এফএমের ভবিষ্যত আমি ভাল মনে করি। তবে এরজন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। না হয় মাঝপথে তাদের থেমে যেতে হবে।
×