অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর টানা ১২ বছরে দেশের জিডিপি চারগুণ বেড়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতার ৩৮ বছরে জিডিপি ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। প্যানডোরা পেপারসে দেশের যেসব ব্যবসায়ীর নাম এসেছে, তাদের তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্ট বিভাগে জমা দিয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল সভায় কমিটির সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আতিরিক্ত সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। ক্রয় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বিদ্যুত বিভাগের ৫টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ১টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ২২ হাজার ২ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৫০৪ টাকা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেন্ট্রাল ইকোনমিক বিজনেস রিসার্চ যুক্তরাজ্য থেকে যেটা প্রকাশ হয়েছে, সেখানে সর্বশেষ প্রতিবেদনে তারা বলেছেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের অর্থনীতির এলাকায় বাংলাদেশ ২৫তম স্থানে উঠতে পারবে। আগামী ২০৪১ সালের যে স্বপ্ন বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে আমরা একটি হবো। ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের অর্জন নিয়ে বিশ্বের অর্থনীতিবিদসহ অনেকে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর দেশের জিডিপি ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এখন সেটা চারগুণ বেড়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলারে (গড়) দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ এবং বর্তমান সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াতে যাচ্ছে। আর এজন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রয়োজন ছিল। আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল করছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলা করে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ভার্চুয়াল বৈঠকে প্যানডোরা পেপারস নিয়ে প্রশ্ন এলে কিছুটা বিব্রতবোধ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি আদালতে নিয়ে গেছে। এ কারণে বিষয়টি হাইকোর্টের এখতিয়ারে আছে। মামলাটি চলমান। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে মতামত দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আপনাদের আপডেট দিতে পারব। তবে সেটা সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া যাবে। মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিটেইলসে আপডেট দেয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রথমে ৪৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা আসে। সে তালিকা হাইকোর্টে দেয়া হয়েছে। পরে যা আসবে, সেটাও দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে। আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার পাবো। আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মেনে নেবো।
১৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ॥ বুধবার সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১৬টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে, যাতে ব্যয় হবে ২২ হাজার দুই কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৫০৪ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ৩০ হাজার মেট্রিকটন ফসফরিক এ্যাসিড ২১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই (লোকাল এজেন্ট ঃ এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইনপুট, ঢাকা) থেকে ১০ হাজার মেট্রিকটন এবং মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই, ইউএই (লোকাল এজেন্ট ঃ মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা) থেকে ২০ হাজার মেট্রিকটন ফসফরিক এসিড কেনা হবে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে ৩০ হাজার মেট্রিকটন (১০ শতাংশের বেশি) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ২৪৮ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে রাষ্ট্র পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এ সার আমদানি করা হবে। বিসিআইসির মাধ্যমে ৩০ হাজার মেট্রিকটন (১০ শতাংশের বেশি) ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার ২৫০ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। কাতারের মুনতাজাত থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এ সার আমদানি করা হবে। ৩০ হাজার মেট্রিকটন (১০ শতাংশের বেশি) বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার ২৪৮ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (এসএবিআইসি) থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে এ সার আমদানি করা হবে।
রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ‘ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্প পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সেতু বিভাগের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকল্পে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী সড়ক নিরাপদ করতে পাঁচটি প্রকল্পের কথা জানান। যার একটি ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন এটা টেন্ডারে দেয়া হবে।