ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

অসময়ে মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ দূর থেকে দেখলে মনে হবে মাচায় লাউ-কুমড়া ঝুলছে। কিন্তু কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলে ভুল ভাঙবে যে এগুলো লাউ বা কুমড়া কিছুই নয়। নেট দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে এক একটা রসালো তরমুজ। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ দিদার হোসেনের বাড়ির সামনে জমিতে গেলে অসময়ে এমন রসালো তরমুজ দেখে যে কারোরই মন ভরে যাবে। সাগর কিং ও গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার কৃষক মোঃ দিদার হোসেনকে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে মোঃ দিদার হোসেন একই জমিতে দুই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম তাকে উন্নতজাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে এ বীজ রোপণ করা হয়। রোপণের ৫৫ দিনের মধ্যে তরমুজের ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় ৬০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এদের মধ্যে কোনোটা ১ কেজি থেকে ২ কেজি ওজন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫-২০ দিন পরেই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এ তরমুজ উৎপাদনে মোঃ দিদার হোসেন প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে করেছেন। এতে এপর্যন্ত তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। সেই হিসেব করে লাভের আশায় কৃষক মোঃ দিদার হোসেন মুখে প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে। কথা হলে কৃষক মোঃ দিদার হোসেন বলেন, ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছি। আমি বিকল্প আয়ের সন্ধান করতে থাকি। এই সময় মাচায় তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষি অফিস থেকে জানতে পারি। এরপর এ বিষয়ে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে অসময়ের এ তরমুজ চাষ করি। এজন্য আমার এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর কিছু দিন পর থেকে তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। এভাবে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আশা করছি আমার সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে লাখ টাকা লাভ থাকবে। আরেক কৃষক শওকত আলী বলেন, আমি মোঃ দিদার হোসেনের তরমুজ চাষ দেখেছি। তিনি তরমুজ চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন বলে তার খরচও অনেক কম হয়েছে। তাই তার অনেক লাভ হবে। সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আগামী মৌসুমে এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ আমিও করবো। শুধু আমি না এলাকায় এমন আরও অনেক কৃষক তরমুজের চাষ করবে। দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম জানান, মোটিভেশনে মাধ্যমেই কৃষক মোঃ দিদার হোসেন অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষ করেছেন। আর মাত্র ২০ দিন পর তার জমি থেকে এসব তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা যাবে। আশা করছি এ কৃষকের সফলতায় আগামী বছর অফ সিজনে উপজেলাজুড়ে এই জাতের তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পাবে। এদিকে, মাচায় তরমুজ চাষ দেখতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার কৃষক ও অন্য লোকেরা তার (কৃষক মোঃ দিদার হোসেন) কাছে আসছেন। কীভাবে আগামীতে তারা নিজ নিজ জমিতে তরমুজ চাষ করবেন সে সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন। আবার অনেকে সেলফি তুলছেন। তিনি আরও জানান, পরিশ্রম করলে তার ফল আসবেই। তার প্রমাণ পেয়েছেন কৃষক মোঃ দিদার হোসেন। তার সামান্য জমিতে সাগর কিং ও গোল্ডে ক্রাউন জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসলই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে উপজেলার আরও অনেক কৃষককে। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান জানান, বাহুবলে সাগর কিং ও গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে সফলতা এসেছে। আশা করা হচ্ছে দিন দিন তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে। আর আমরা বিষমুক্ত তরমুজ চাষে কৃষকদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
×