ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

সপ্তম দিনে মুগ্ধতা ছড়াল আঞ্চলিক গান নৃত্য

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

সপ্তম দিনে মুগ্ধতা ছড়াল আঞ্চলিক গান নৃত্য

গৌতম পাণ্ডে ॥ বাঙালীর প্রাণের স্পন্দন লোকসঙ্গীত। ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি আর বাউল গানের সুরে মাতোয়ারা হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এসব গান বাঙালীর হৃদয় ছুঁয়ে যায় সব সময়, সবখানেই। এই গানে মিশে আছে চিরকালের মুগ্ধতা। লোকগীতির সেই মরমি সুরধারায় উদযাপিত হলো বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। এফবিসিসিআই আয়োজিত হাতিরঝিলের এ্যামফিথিয়েটারে চলমান এ অনুষ্ঠানের সপ্তম দিন ছিল মঙ্গলবার। অনাকাক্সিক্ষত বৈরী আবহাওয়ায় ৫ ও ৬ নবেম্বর পরপর দুদিন অনুষ্ঠান সচল রাখতে পারেনি আয়োজকরা। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে নামে সন্ধ্যা। আর সেই সন্ধ্যার পর নেমে আসে রাত, আর সে সময় দেশের আঞ্চলিক গানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন। রাজধানীর বিরক্তিকর যানজট উপেক্ষা করেও শ্রোতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন ময়মনসিংহ ও ঢাকার আঞ্চলিক গানে সরব ছিল গোটা আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন ভূখ- পেয়েছি। অতি অল্প সময়ে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের বুলেট তার সেই স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। তার সুযোগ্যা কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে বদ্ধপরিকর। তার হাত ধরে আমরা স্বাধীনতার এই ৫০ বছরের অর্জনকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। বিজয়ের এই মাসে আমাদের এই প্রত্যয় হউক আমরা যেন সারাবিশ্বে বাঙালী জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এবং গর্ব করে বলতে পারি আমরা বাঙালী। মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমরা বাঙালী। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিম-লেও আমার রয়েছে সরব উপস্থিতি। আমরা ঢাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা নগর এ্যাপস তৈরি করছি। যার মাধ্যমে ঢাকার যে কোন কেউ তার এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, যাদের কারণে আজ আমরা জাতি হিসেবে গর্বিত সেই মুক্তিযোদ্ধাদের এই মুহূর্তে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি না হলে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম না। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। আলোচনার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতে মঞ্চে আসে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক গানের শিল্পীরা। মরমী শিল্পী শাহ্ আবদুল করিমের ‘জীবন আমার ধন্য যে ভাই জন্ম বাংলা মায়ের কোলে’ দলীয় গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের পরিবেশনা। এরপর দলীয়ভাবে পরিবেশন করে মরমী গীতিকবি জালাল খাঁ’র গান ‘কূল নাই দরিয়া পারের’। পরে একক পরিবেশনায় ছিল শাহ্ আবদুল করিমের লেখা ও সুরে ‘তুমি মানুষ আমি মানুষ সকলে মায়ের সন্তান’ গানটি। ময়মনসিংহের এ দলটির পরিবেশনায় ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত নৃত্য। ‘বাংলা মোদের জন্মভূমি বাংলা মোদের ভাষা, যার নেতৃত্বে পেয়েছি স্বাধীনতা হে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তোমাকে জানাই কোটি কোটি সালাম’, ‘জয় বাংলা বাঙালী জয়’, ‘লাল সবুজের পাল তুলে দিন বদলের নৌকা চলে’ ও ‘যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীস্টান জাতিভেদ নাহি রবে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা। ‘মহুয়া’ নৃত্যনাট্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ময়মনসিংহ দলের সাংস্কৃতিক আয়োজন। পরে আঞ্চলিক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে ঢাকার শিল্পীরা। পালাকার ইসলাম উদ্দিন ও তার দলের পরিবেশনায় ছিল ‘কমলা রানীর সাগর গিতি’ শীর্ষক দলীয় পরিবেশনা। সঙ্গীতশিল্পী ঐশীর পরপর কয়েকটি গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সপ্তম দিনের আয়োজন। নবাবগঞ্জের অনুষ্ঠান ॥ কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ঢাকা রেঞ্জের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮ টায় নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা বান্দুরা আনসার ক্যাম্পে এটি আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে পরিবেশন করা হয় দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিচালক ফাতেমা সুলতানা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ ৩৮ আনসার বাহিনীর পরিচালক শাহ আহমদ ফজলে রাব্বি, নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ঝিল্লুসহ অনেকে।
×