ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরও দুই আসামি গ্রেফতার ॥ ৫ দিন করে রিমান্ড

পরিকল্পনাকারী অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতারা এখনও ধরা পড়েনি

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

পরিকল্পনাকারী অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতারা এখনও ধরা পড়েনি

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লা সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহআলমসহ এজাহার নামীয় তিন আসামি ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ৪ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে এবং মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ ঘটনার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও চাঞ্চল্যকর এ খুনের পরিকল্পনাকারী, অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা কারা খুনের উদ্দেশ্যইবা কি ছিল এসব বিষয় পরিষ্কার নয় কোন মহল। এছাড়া পরিকল্পনাকারী, অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতাসহ ইন্ধনদাতারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিহতদের পরিবার ও নগরবাসীর দাবি খুনের পরিকল্পনাকারী নেপথ্যে নায়কদের সহসায় খুঁজে বের করে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। এদিকে জেলা ডিবি পুলিশের একটি দল সোমবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে এ মামলার দুই নং আসামি সোহেল প্রকাশ জেল সোহেল ও ১০ নং আসামি সয়মন প্রকাশ মুহুরী সায়মনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মঙ্গলবার বিকেলে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কুমিল্লা নগরীর পাথুঁরিয়া পাড়া এলাকায় গত ২২ নভেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে কাউন্সিল সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যার ঘটনায় সোহেলের ভাই সৈয়দ মোঃ রুমন বাদী হয়ে ২৪ নবেম্বর শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ১১ জনকে এজহার নামীয় ও ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শাহআলম গত ১ ডিসেম্বর গভীর রাতে এর আগে এ মামলার আসামি সাব্বির ও সাজন ৩০ নবেম্বর গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহা হত্যা মিশনে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বোমা নগরীর সংরাইশ বড় পুকুর পাড় এলাকা থেকে এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার গান্ধাছি গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাহ আলমের জেল খাটা জীবনের বন্ধু শাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ জুয়েলের নিকট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া র‌্যাব-পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার নামীয় ৪ আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে আশিকুর রহমান রকি, আলম, মাসুম ও জিসানসহ ৪ আসামিকে আদালত ৬ ডিসেম্বর সোমবার ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। নিহতের পরিবারসহ স্থানীয় সূত্রগুলো জানায় কাউন্সিলর সোহেলকে যারা হত্যা করেছে তাদের এত বড় সাহস নেই যে, প্রকাশ্য দিবালোকে তারা এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে। তাদের বদ্ধমূল ধারণা নিশ্চয়ই এ খুনের পেছনে কেউ না কেউ মূল পরিকল্পনাকারী-নেপথ্যে ইন্ধনদাতা ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এ শাহ আলম বড় মাপের সন্ত্রাসী হয়ে বিশাল অস্ত্র ভান্ডার গড়ে তোলার পেছনে কেউ না কেউ পেছন থেকে শক্তি, সাহস ও আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করেছিল। এছাড়া এ হত্যাকা-ের কি উদ্দেশ্যইবা ছিল? শাহ আলমসহ তিনজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর নিহতদের পরিবারসহ নগরবাসীর মনে এমন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে। তারা বলছেন শাহ আলমকে জীবিত ধরা গেলে হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী, অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতাসহ নেপথ্যে নায়কদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে যতটা সহজ হতো প্রধান আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার কারণে এসব তথ্য খুঁজে বের করতে অনেকটা বেগ পেতে হবে তদন্তকারী সংস্থাকে। ফলে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, অর্থ- অস্ত্রের যোগানদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও নগরবাসী। তবে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চলছে, এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুজন আসামিসহ অনেক আসামি গ্রেফতার ও নিহত হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা-ই জড়িত থাকুক না কেন, তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবিএলআইসি) টিমের প্রধান পরিমল চন্দ্র দাস জানান, সোমবার গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পালপাড়া এলাকা থেকে এ মামলার ২নং আসামি কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার নবগ্রামের শাহ আলমের ছেলে সোহেল প্রকাশ জেল সোহেল (২৮) ও ১০নং আসামি একই গ্রামের মৃত শামছুল হকের ছেলে সয়মন প্রকাশ মুহুরী সায়মনকে (৩০) কুমিল্লার পাঁচথুবীর বাংলা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মঙ্গলবার বিকেলে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার জানান, এ হত্যার ঘটনায় এজহার নামীয় ১১ জন আসামির মধ্যে ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এছাড়াও ৭ জন এজাহার নামীয়সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
×