ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও পরাজয়ের শঙ্কায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও পরাজয়ের শঙ্কায় বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মঙ্গলবার রাতটা দুঃস্বপ্নে কেটেছে বাংলাদেশের। আশীর্বাদের বৃষ্টিতে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রের দ্বিতীয় ম্যাচেই পয়েন্টের মুখ দেখার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন মুমিনুল হকরা। কিন্তু ম্যাচের আড়াই দিনেরও বেশি সময় বৃষ্টিতে প- হলেও চতুর্থ দিন মাত্র ৬১.১ ওভার খেলা হওয়াতেই মুমিনুলদের হৃদয়ে স্বপ্ন ভাঙ্গার খাঁ খাঁ শূন্যতা ভর করেছে। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি শেষে চতুর্থ দিন সকালে সোনালি রোদের আভাটাও দেখা যায়নি। কালো মেঘে ঢাকা আকাশে পরিবেশটা আলোর স্বল্পতায় ডুবে ছিল। তাই বিলম্বে শুরু হওয়া খেলা প্রায় ২৫ ওভার বাকি থাকতেই থেমেছে। এর মধ্যেই ২২৪ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ লড়ছে ফলোঅনের লজ্জা এড়াতে। বঙ্গোপসাগরে জাওয়াদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবটা মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খাটালেন অফস্পিনার সাজিদ খান। বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ওপরের সারির ৭ ব্যাটার বিদায় নিয়েছে, ৬টিই সাজিদের শিকার। পাকিস্তানের ৪ উইকেটে ৩০০ রানে ঘোষিত প্রথম ইনিংসের জবাবে বাংলাদেশের বোর্ডে জমা মাত্র ৭৬ রান। আরও ২৫ রান দরকার বিপদসীমা এড়াতে! চ্যালেঞ্জটা নিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী নেই স্বীকৃত কোন ব্যাটার। দিনশেষে নাজমুল হোসেন শান্তও আশাবাদী ভাল ব্যাটিং করতে পারলেই শুধু হার এড়ানো সম্ভব বাংলাদেশের। বাংলাদেশ দলের জন্য আজকের সকালটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মিরপুর টেস্টে মর্যাদাহানিকর কিছু ঘটা থেকে বাঁচার জন্য দারুণ ব্যাটিং করতে হবে বাংলাদেশী ব্যাটারদের। বৃষ্টি, আলোর স্বল্পতায় ৪ দিনে মিরপুর টেস্টে খেলা হয়েছে মাত্র ১২৪.৩ ওভার। এই সময়ের মধ্যেই কোণঠাসা বাংলাদেশ দলকে দুঃসহ যন্ত্রণার এক রাত উপহার দিয়েছে মিরপুরের উইকেট। যে উইকেটে চার অর্ধশতকে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০০ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে পাকিস্তান, সেখানে স্বাগতিক হয়েও টালমাটাল বাংলাদেশী ব্যাটাররা। পরিবেশটা সুন্দর পেসারদের জন্য, পাক পেসাররা চট্টগ্রাম টেস্টেই ১৬ উইকেট তুলে নিয়ে তাদের কার্যকারিতা দেখিয়েছেন ভালভাবে। মিরপুরের আবহাওয়া তাদের গতি, সুইং ও বাউন্সের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছে বৃষ্টিতে সিক্ত পরিবেশ, আর্দ্র উইকেট ও ঠা-া আবহাওয়ার দরুন। কিন্তু বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নামার পর ভিন্ন পরিকল্পনায় ঘূর্ণি জাল বিছিয়েছে পাকরা। শুধু ডানহাতি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদিই প্রথম ওভারটা করেছেন। এরপর আর কোন পেসারকে আসতে হয়নি আক্রমণে। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই ছোবল দেন অফস্পিনার সাজিদ, ফিরে যান অভিষিক্ত ২১ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয়! ৭ বলে শূন্যতেই শেষ অভিষেক হওয়ার আনন্দটা। এরপর দুইবার জীবন পাওয়াতে নাজমুল হোসেন শান্ত টিকে থাকতে পেরেছেন বেশ লম্বা সময়। তবে সাদমান ইসলাম (২৮ বলে ৩), মুমিনুল হক (২ বলে ১), মুশফিকুর রহিম (৮ বলে ৫) ও লিটন দাস (১২ বলে ৬) সবাই ফিরে গেছেন দ্রুত। মুমিনুল শুধু রানআউট হয়ে বেঁচেছেন সাজিদের ঘূর্ণি বিষ থেকে। বাকিরা তারই শিকার হয়েছেন। এমনকি শান্তও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ইনিংসে ৫ উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান সাজিদ। শান্ত ৫০ বলে ৩ চারে ৩০ করেন। পরে মেহেদি হাসান মিরাজকেও (৮ বলে ০) বোল্ড করেছেন। আলোর স্বল্পতায় দিন শেষ হওয়াতে স্বস্তি নেমেছে ৭ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান করা বাংলাদেশ দলে। শুধু ফলোঅন এড়াতেই এখনও প্রয়োজন ২৫ রানের। আজ আগেভাগেই ম্যাচ শুরু হবে সম্ভব হলে। আবারও প্রকৃতির আশীর্বাদ ছাড়া সেটি করা দারুণ কঠিন বাংলাদেশের জন্য। তবে শান্ত বলেছেন, ‘কালকের শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব ভাই ও তাইজুল ভাই যদি ভাল শুরু করতে পারে তাহলে পরের ইনিংসের জন্য সুবিধা হবে। পরের ইনিংসে আমাদের ভাল ব্যাটিং করতে হবে। ভাল ব্যাটিং করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব।’ তার কথাতেই স্পষ্ট এই ইনিংসে আর বড় কোন আশা নেই বাংলাদেশের। ফলোঅন এড়াতে পারলেও সাকিবের সঙ্গী কোন স্বীকৃত ব্যাটার না থাকায় প্রথম ইনিংসে খুব বেশি দূর যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ মুমিনুলদের। সাকিব বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ৩২ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত। আক্রমণাত্মক মনোভাব ছিল লিটন, মিরাজদেরও। দলের বিপর্যয়েও ব্যাটারদের এমন মনোভাবের বিষয়ে শান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের একটা কারণ ছিল- উইকেটে যত রক্ষণাত্মক খেলবেন তত কঠিন হয়ে উঠবে। এখানে রান করাও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ব্যাটাররা যার যে শটে ভাল দক্ষতা আছে তারা সেই শট খেলতে চেয়েছে। এখানে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললে আউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবায়নটা ওরকম হয়নি।’ আজ সকালে যেভাবেই হোক প্রয়োগটাতে সফল হতে হবে বাংলাদেশী ব্যাটারদের। প্রথমে ফলোঅন এড়াতে হবে, সেটি হোক বা না হোক অন্তত দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটাররা ধৈর্য দেখিয়ে এবং নিজেদের সামর্থ্যরে প্রয়োগ ঘটিয়ে দারুণ কিছু না করতে পারলে মিরপুর টেস্টে স্বল্প সময়ের যে খেলা হচ্ছে তাতেই হারের লজ্জা বরণ করতে হবে। আর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রের শুরুতেই কপর্দকহীন থাকতে হবে। তবে ড্র করতে পারলেও অন্তত ৪ পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ।
×