ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ পাকিস্তানের দ্বিগুণের বেশি টাকার মান রুপীর দ্বিগুণ মাথপিছু আয়েও দেশ ওপরে

তলাবিহীন ঝুড়িতে বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

তলাবিহীন ঝুড়িতে বিলিয়ন ডলার

রহিম শেখ ॥ স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানীরা বলত, স্বাধীন হলে তোমরা খাবে কী? পাট, চা ও চামড়া এই তিন পণ্য রফতানি করে কি তোমাদের ভাত-কাপড় হবে? আরও মারাত্মক কথা বলেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। পাকিস্তানীদের এ দোসর স্বাধীনতার পর বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটা তলাবিহীন ঝুড়ি।’ কিন্তু বাংলাদেশ যে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়, উল্টো অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা দুদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি তুলনা করলেই প্রমাণ মেলে। গত নবেম্বর শেষে পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের রিজার্ভ গত আগস্টেই ছাড়িয়ে যায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এই তথ্যই বলছে, পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রিজার্ভ এখন বাংলাদেশের। শুধু রিজার্ভের নিরিখেই যদি বিচার করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। বাংলাদেশে রিজার্ভে ভর করে টাকার মান এখন পাকিস্তানী রুপীর দ্বিগুণ। মাথাপিছু আয়েও পাকিস্তানের দ্বিগুণ এখন বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ এখন অতিদ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর পর বাংলাদেশের কোন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল না। বলা যায়, শূন্য রিজার্ভ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার পরের বছরের ২৯ জুনে স্বাধীন দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ১৯৮১-৮২ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে বিদেশী মুদ্রার মজুদ জমতে শুরু করে। ওই অর্থবছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। পাঁচ বছর পর ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে উঠে। পরের ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর শেষেই রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর শেষে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এর পর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভ ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। সে সময় আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত। আর রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না- এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেয়া হয় তখন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর পর অবশ্য কখনই রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আসেনি। ২০০১-০২ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ বেড়ে হয় ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বেড়েই চলেছে অর্থনীতির এই সূচক। ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। পরের বছর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়ায়। শুধু পাকিস্তানের চেয়েই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার চেয়ে আটগুণ বেশি এখন বাংলাদেশের রিজার্ভ। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেদেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর ভারতের রিজার্ভ ছিল ৫৭৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতার বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে রিজার্ভকে এখন দেখাচ্ছে সরকার। অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতও বলেন, রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকারকে সাহস জোগাচ্ছে। রেমিট্যান্স ও রফতানির ওপর ভর করে গড়ে ওঠা বিশাল রিজার্ভ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন হয় ডলারে, আর তা দিয়ে মেটানো হয় আমদানি ব্যয়। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। প্রতিমাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে বর্তমানে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। টাকার মান এখন পাকিস্তানী রুপীর দ্বিগুণ ॥ বাংলাদেশের ১০০ টাকার জন্য এখন ২০৪ পাকিস্তানী রুপী খরচ হচ্ছে। অথচ স্বাধীনতার পর পর চিত্রটা ছিল উল্টো। তখন পাকিস্তানের ১০০ রুপীর মান ছিল বাংলাদেশের ১৬৫ টাকা। গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান খানিকটা কমেছে। তার পরও বাংলাদেশী মুদ্রার মান পাকিস্তানের মুদ্রা রুপীর দ্বিগুণ। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার প্রতি ডলারের জন্য ৮৫ টাকা ২০ পয়সা গুনতে হয়েছে। আর প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ১৬৬ দশমিক ৭৭ পাকিস্তানী রুপী। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ১০০ টাকার জন্য এখন ১৯৫ পাকিস্তানী রুপী খরচ হচ্ছে। অথচ স্বাধীনতার পর পর চিত্রটা ছিল উল্টো। তখন পাকিস্তানের ১০০ রুপীর মান ছিল বাংলাদেশের ১৬৫ টাকা। ২০০৮ সালকে ধরা হয় পাকিস্তানের রুপীর বিনিময় হারের পতনের বছর। ওই বছর মূল্যস্ফীতি ও চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে রুপীর দর ৬১ থেকে এক ধাক্কায় ৭৯ রুপীতে পৌঁছায়। ওই বছরের আগস্টে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে রুপীর পতনের সাময়িক অবসান ঘটে। এর পরও গত এক দশকে মুদ্রার মান অর্ধেকে নেমেছে পাকিস্তানে। যদিও এ সময়ে পাকিস্তানকে সুইডেন বানানোর স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানকে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৪ থেকে ১০৫ রুপী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক ডলারের দর ছিল ১০৯ রুপী। গত তিন অর্থবছরেই পাকিস্তান প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপীর বাজেট দিয়েছে। প্রতিবারই ৩ লাখ কোটি রুপীর বিশাল ঘাটতি ধরা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার মতো। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিক দিয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) গত জুলাই মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ ও মুদ্রানীতি বিভাগের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় যুক্তরাজ্যের এক পাউন্ড স্টার্লিংয়ে পাওয়া যেত বাংলাদেশী ১৮ দশমিক ৯৬ টাকা। তখন পাউন্ডের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রার মান ছিল ১১ দশমিক ৪৩ রুপী। সেই হিসাবে তখন এক পাকিস্তানী রুপীর বিপরীতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হতো ১ দশমিক ৬৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আশরাফ আলী মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে কাজ করতেন। ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ’ শিরোনামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। সেই বইতে তিনি লেখেন, ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ হয় আশির দশকের শুরুর দিকে। তবে ১৯৭২ সালেও আমরা ডলারের সঙ্গে টাকার একটি বিনিময় হার বের করেছিলাম। তখন এক ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৮৬ টাকা এবং পাকিস্তানের ৪ দশমিক ৭৬ রুপী ছিল। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির দীর্ঘকাল পরও পাকিস্তানের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী ছিল। তবে সেই অবস্থানে এখন আর নেই দেশটি। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণ ও মূল্যস্ফীতির চাপে রুপীর অবস্থান এখন বেশ নাজুক। টাকা এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। সৈয়দ আশরাফ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশে নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন শুরু ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। এর আগে পাকিস্তানের রুপী দিয়েই হতো লেনদেন। তবে বৈদেশিক লেনদেনের জন্য বিনিময় হার নির্ধারণ করতে হয়েছিল টাকা প্রচলনের আগেই। তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে শর্ত দেয়া হতো যে, একবার একটি বিনিময় হার ঠিক করা হলে আইএমএফকে না জানিয়ে সে হার পরিবর্তন করা যাবে না। এ ধরনের বিনিময় হার নির্ধারণকে ফিক্সড রেট পদ্ধতি বলা হয়। বর্তমানে ফ্লোটিং রেট পদ্ধতিতে (ভাসমান মুদ্রা বিনিময় হার) প্রতিনিয়ত মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তন হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পরের বছর পাকিস্তানে চালু হয় নিজস্ব মুদ্রা ‘রুপী’। সে সময় থেকে দেশটি ব্রেটন উডস পদ্ধতিতে বিনিময় হার বেঁধে দিত। তখন এক ডলার কিনতে তাদের ব্যয় করতে হতো তিন রুপীর কিছু বেশি। বর্তমানে এক ডলার কিনতে পাকিস্তানী মুদ্রায় খরচ হয় ১৬৬ দশমিক ৭৭ রুপী। সেখানে বাংলাদেশের খরচ হয় ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। মাথাপিছু আয়েও পাকিস্তানের দ্বিগুণ বাংলাদেশ ॥ অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক মাথাপিছু আয়েও পাকিস্তানের দ্বিগুণ বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ১৬৮ ডলার। আর বাংলাদেশের ২ হাজার ২৭৭ ডলার। দুই দেশের অর্থনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির গবেষক ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই আরও সংস্কার করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করার দিন শেষ। আমাদের এখন সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-ভিয়েতনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে। এ দেশের তুলনা চলে ভারতের মতো দেশের সঙ্গে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামনিয়াম একটি নিবন্ধে লিখেছেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের উজ্জ্বল মডেল। ভারত ও পাকিস্তানের জন্য মডেল হতে পারে দেশটি। ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করেছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সবার চোখে পড়ার মতো। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে লেখা ওই নিবন্ধে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা নিয়ে মুগ্ধ হয়ে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বিশ্লেষণ ও মতামতভিত্তিক ওয়েবসাইট প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে অরবিন্দ সুব্রামনিয়ামের নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে। সাইটটিতে বিশ্বের খ্যাতিমান লেখকরা লিখে থাকেন। নিবন্ধে অরবিন্দ সুব্রামনিয়াম লেখেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বছরের পর বছর ধরে বিদেশী সহায়তা ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল এবং উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের বসবাসের কারণে একটি গরিব দেশ হিসেবেই এতদিন বাংলাদেশকে জেনে এসেছি। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের প্রথম উপন্যাস ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো পড়ে বাংলাদেশকে ‘দুঃখের ঝুড়ির দেশ’ দেশ হিসেবেই জেনেছি। কিন্তু এই বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ এখন অতিদ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা বিস্ময়, অলৌকিক ঘটনা মনে হচ্ছে আমার কাছে।
×