ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ সামিউল আউয়াল সাক্ষর

ত্বকের সুরক্ষায় শীতে করণীয়

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

ত্বকের সুরক্ষায় শীতে করণীয়

ঋতু পরিবর্তনের পালাক্রমে বাংলাদেশে শীত আসন্ন। প্রকৃতির সেই প্রভাব পড়ে মানুষের ওপরও। ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, রুক্ষ ও খসখসে। ঠোঁট ফেটে যায়। পায়ের গোড়ালি থেকে চামড়া ওঠাসহ আরও নানা সমস্যা দেখা দেয় শীতে। তাই শীতে ত্বকের বাড়তি যতœ প্রয়োজন। শীতকালে ত্বকের যতেœ করণীয় শীতকালে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ রাখা অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে সাধারণত ত্বকের প্রাকৃতিক যে আর্দ্রতা সেটা বজায় রাখে। শীতের শুরুতেই ত্বক উপযোগী একটা ভাল ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। এছাড়া শীতে শরীরে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে সরষের তেল ব্যবহার করে আসছে মানুষ। এছাড়া অলিভ অয়েল তেল, নারিকেল তেল, এবং অন্যান্য তেল ও ব্যবহার যেতে পারে এবং তা অবশ্য উপযুক্ত হতে হবে। গোসলের পর ও মুখ ধোঁয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশান ব্যবহার করা ভাল। রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় রাতে ঘুমানোর আগে আমরা নিয়মিত যে পরিমাণ ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করি তার থেকে বেশি পরিমাণ ময়েশ্চারাইজার লোশন আমাদের ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ত্বকের যে খসখসে ভাবটা আছে সেই খসখসে সে ভাবটা দূর হবে। ত্বকের আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল বা তরল প্যারাফিন মাখতে পারি। সাধারণত যাদের বয়স ৩০ বা তার থেকে বেশি তারা নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারে। তবে তার ত্বকের জন্য যেটা উপযোগী সেই নাইট ক্রিম টা ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহারে করণীয় শীতের মৌসুমে বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে মুখে হাতে পায়ে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোদের যে এক ধরনের প্রভাব থাকে সেই প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে পারে। অর্থাৎ শীতকালেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে শীতকালে অনেককেই দেখা যায় তুলনামূলকভাবে পানি কম পান করে থাকে। এটা ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতি করে। কম পানি পান করার ক্ষেত্রে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে ত্বকে নানা রোগ সৃষ্টি করে অন্যদিকে ত্বক খসখসে হয়ে যায় ও রুক্ষ করে দেয়। তাই ত্বককে সুন্দর রাখতে বেশি বেশি পানি পান করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম মেনে গোসল করতে হবে শীত এলে অনেকেই অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করে। এতেও ত্বক আরও শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে পড়ে। শীতকালে যদি নিয়মিত গোসল করা যায়, সে ক্ষেত্রে ত্বক শুষ্ক হাওয়া ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে গোসলের সময় অবশ্যই অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা কোনভাবেই উচিত নয়। গোসলের সময় কুসুম পানি ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে মেকআপের যতœ মেকআপ করার সময় অনেকেই লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে থাকে। সেই লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পরিবর্তে ক্রিম ফাউন্ডেশন ব্যবহার করাটা ভাল মেকআপ করার সময়। শীতকালে চুলের যতœ শীতকালে আমাদের কখনই ভেজা চুলে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এতে করে যেটা সমস্যা হয় চুল ভেঙে যেতে পারে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধে করণীয় শীতকালে আর্দ্রতার জন্য শরীর ত্বক ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। শীতকালে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। কারণ ডিহাইড্রেশনের কারণে ডার্ক লিপ্সের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে যেমন, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, বড়ই, বেশি বেশি খেতে হবে। এবং কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল তেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগায় সে ক্ষেত্রে ঠোঁট ফাটবে না। ঠোঁটকে সজিব রাখতে বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁটকে ভেজানো যাবে না। এতে ঠোঁট আরও শুকায়ে যায়, তাই লিপজেল বা লিপবাম ব্যবহার করতে হবে। ঠোঁট শুকনা লাগলে লিপজেল লাগিয়ে দিতে হবে। বিশেষত মেয়েদের জন্য ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার না করাই ভাল। শীতকালে চুলকানির সমস্যায় করণীয় শীতকালে শরীর এবং ত্বক খুবই শুষ্ক হয়ে যায়। ময়েশ্চারাইজার কমে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের চুলকানি দেখা দেয়। এবং রাতে চুলকানির তীব্রতা বেশি বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে করণীয় কী কী? ভাল ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। এবং একজনের ক্ষেত্রে কিন্তু একেক টা উপযোগী অর্থাৎ কার জন্য কোনটা উপযোগী সেটা অনুসারে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ক্রিম পাওয়া না গেলে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির পরিমাণ যদি বেশি হয় সে ক্ষেত্রে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। শীতকালে কিছু নরম পোশাক পরিধান করতে হবে ও পরিষ্কার কাপড় চোপড় পড়তে হবে। চুলকানি হলে এ্যান্টি-এ্যালার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানি যদি একেবারেই না কমে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শীতকালে পায়ের যতেœ করণীয় শীতকালে পা নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার করা। এতে পায়ের পাতায় থাকা শুষ্ক ত্বক এ সমস্যাটা কমে যায়। হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখলে শক্ত চামড়া ও মৃত চামড়া আলগা হয়ে যায়। এটা পায়ের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি করে এবং পায়ের ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে। শীতের সময়ে মুজা পড়ে থাকার অভ্যাস করতে হবে। পায়ের পাতা সুরক্ষায় অলিভ অয়েল মাসাজ এবং গ্লিসারিন মাসাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এতে পা ফাটা রোধ করা যায়। হাতের যতœ করণীয় মধু, লেবুর রস, চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মতো। এরপরে একটু শুকনো হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে হাতটা ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে হাতটা নরম থাকবে। থালা-বাসন কাপড় পরিষ্কার এর ফলে হাত অনেকটাই শুষ্ক হয়ে যায় শীতকালে। খুব ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যাবে না। থালা বাসন পরিষ্কারের সময় গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। হাতে মশ্চারাইজার বা লোশন মাখতে হবে। যতবার প্রয়োজন ততবার মাখতে হবে। লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা
×