ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে পানির নিচে আলু খেত ॥ বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

মুন্সীগঞ্জে পানির নিচে আলু খেত ॥ বিপাকে কৃষক

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে রোপণ করা আলুর জমিতে পানি জমে আছে। তাই রোপণকৃত আলু বীজ বিনষ্টের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় কৃষক। বৃষ্টি ভাসিয়ে নিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। আলু বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষক। কৃষক পানি সরানোর চেষ্টা করছে। আর বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে সার। আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে এখন আলুর ভরা মৌসুম। গেল দুই সপ্তাহ ধরে ধুম আলু রোপণ চলছিল। জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রায় অর্ধেক জমিতেই রোপণ স¤পন্ন এখন। বাকি জমিতেও এখন রোপণের সব প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সব থমকে গেছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবের এই বৃষ্টি। কৃষকের এখন ত্রাহি অবস্থা। জেলার সদর উপজেলার সাতানিখিল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এই যেন গজব। সব শেষ হয়ে গেলো। ধার-দেনা করে এককানি জমিতে আলু রোপণ শেষ করছি। গাছও উঠেনি, ধুম বৃষ্টি।’ মাটির নিচে থাকা বীজ আলু সব পচে যাবে। জমে থাকা জমির পানি সরানোর চেষ্টা করছেন এই কৃষক। কোদাল হাতে এই কৃষক বলেন, জানি এতে কিছুই হবে না, কারণ পুরো জমিন ভরা বৃষ্টির পানি। খড়ের ফাঁকে ফাঁকে পানি। তারপরও মন মানে না। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই চেষ্টা করছি। আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম ছৈয়াল বলেন, চার কানি জমির সবই আলু রোপণ করেছেন। অগ্রহায়ণ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হচ্ছে। তাই আলু রোপণ সম্পন্ন করতে হয়েছে। কিন্তু আলুর গাছ ওঠার আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে জমি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ খুরশীদ আলম জানান, গেল মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এবার তার চেয়েও বেশি ফলনের টার্গেট ছিল। কিন্তু আলু জমিতে পানি জমে যাওয়ার কারণেই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। বাকি জমিতে রোপণের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু বাঁধ সেধেছে এই অসময়ের বৃষ্টি। রবিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে সোমবার দিনভর অঝোর ধারায় চলছে। কৃষি বিভাগ জানায়, যেসব জমির আলু বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেগুলোর পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু জমি শুকানোর পর নতুন করে চাষ করাতে আরও পনেরো দিন লেগে যেতে পারে। আবার নতুন করে বীজ সংগ্রহ করাও চ্যালেঞ্জ। আর নতুভাবে সারও ছিটতে হবে। এছাড়া যে জমিগুলোতে এষনও রোপণ হয়নি, সেই জমির চাষ আরও নাবী হয়ে যাবে। শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রানী জানান, উপজেলায় প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে আলুর বীজ বপন করা হয়েছিল। জমিতে আলুর চারা এখনও গজায়নি। টানা বৃষ্টির পানি জমার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে আলু চাষীরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ক্ষতি পরিমাণের বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
×