ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমিতি সংগঠন খুলে ফায়দা লুটে নিচ্ছে বিশেষ শ্রেণী

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

সমিতি সংগঠন খুলে ফায়দা লুটে নিচ্ছে বিশেষ শ্রেণী

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ নৃ-গোষ্ঠী জনগণের সরকারী সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি শ্রেণী। যারা নৃ-গোষ্ঠী নয় তারা বিভিন্ন নামে কৌশলে সংগঠন ও সমিতি খুলে অর্থ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা নিচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত নৃ-গোষ্ঠী। সরকার নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়কে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনের তফসিল যুগোপযোগী করার পর একটি শ্রেণী অবৈধ কাজ শুরু করেছে। তারা নৃ-গোষ্ঠী না হয়েও সমিতি খুলে সরকারী অর্থসহ নানা সুবিধা নিচ্ছে। বিষয়টি প্রকৃত নৃ-গোষ্ঠীর নেতাদের দৃষ্টিতে আসার পর অচলায়তন দূর করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সারাদেশে গেজেটভুক্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাত ৫০টি, যাদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এদের মধ্যে সমতল ভূমির নৃ-গোষ্ঠী ২০ লাখ, যাদের বেশিরভাগ হিন্দু ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের। পাহাড়ী নৃ-গোষ্ঠী ১০ লাখ, যাদের বেশিরভাগ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। বগুড়া জেলা আদিবাসী ফোরামের আহ্বায়ক দেব বাগদী জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অবহেলিত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে। দেশে প্রথম ২০১০ সালের ২৩ নম্বর আইনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক আইন প্রতিষ্ঠার পর গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপর মাঠপর্যায়ে নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়নে আইনে আরও কিছু সংযোজনের প্রয়োজন হয়। দু’বছর আগে নতুন কিছু তফসিল প্রতিস্থাপিত হয়। এই প্রতিস্থাপনে দেশে মোট ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম সংযোজিত হয়। তারা হলো- ওরাওঁ কোচ, কোল, খাসিয়া, খিয়াং, খুমি, গারো, চাক, চাকমা, ডালু, তঞ্চঙ্গা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, বম, বর্মণ, মণিপুরী, মারমা, কন্দ, কড়া, গঞ্জু, গড়াইত, গুর্খা, তেলী, তুরী, পাত্র, বাগদী, বানাই, হো, ভিল পাহাড়ী/মালপাহাড়ী, মু-া, ম্রো, রাখাইন, লুসাই, সাঁওতাল, হাজং, মাহাতো/কুর্মিমাহাতো/ বেদিয়া মাহাতো, হুদি, বড়াইক, বেদিয়া, ভূমিজ, ভূঁইমালী, মালো/ঘাসিমালো, মাহালী, মুসহর, রাজোয়ার, লোহার, শবর, খাড়িয়া, খারওয়ার। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বগুড়া অঞ্চলের নেতা জানান, বিভিন্ন উপজেলায় কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নৃ-গোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে ভুল তথ্য দিয়ে সংগঠন ও সমিতি দাঁড় করিয়েছে। তারা সমাজ কল্যাণ বিভাগ থেকে নিবন্ধন নিয়ে নৃ-গোষ্ঠীর বরাদ্দের সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ আদিবাসী সেজে সমিতির রেজিস্ট্রেশন করিয়ে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে নৃ-গোষ্ঠীর সরকারী সূযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। তারা অনেকই সরকারী তালিকার নৃ-গোষ্ঠী নয়। গেজেটে তাদের নৃ-গোষ্ঠীর পরিচয় নেই। উদাহারণ দিয়ে জানান, বগুড়ার ধুনট, গাবতলি ও সারিয়াকান্দিতে ৬টি সংগঠন (যাতের কোন বৈধতা নেই) নৃ-গোষ্ঠীর বরাদ্দকৃত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারী নৃ-গোষ্ঠী নামের তালিকায় রবিদাস, কোনাই, হাওলাদার নেই। অথচ এরাই নৃ-গোষ্ঠীর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। হাওলাদার সম্প্রদায় মূলত জেলে। সরকার জেলেদের জন্য আলাদা বরাদ্দ দিয়েছে। এই বরাদ্দে নদী তীরের ও চরগ্রামের প্রতিটি এলাকার জেলে নিজেদের জীবনমান উন্নত করছে। এই জেলেদের কেউ নিজেদের নৃ-গোষ্ঠী সাজিয়ে সরকারের বাড়তি দুটি সুবিধা নিচ্ছে। যারা রবিদাস (মুচি নামে অধিক পরিচিত) তারা সমাজ কল্যাণ থেকে সরকারী বরাদ্দ পেয়ে জীবনমান উন্নীত করছে। সরকারের নৃ-গোষ্ঠীর নামের তালিকায় রবিদাস নেই। তারাও নিজেদের আদিবাসী ও নৃ-গোষ্ঠীর নামের সমিতি খুলে সরকারী সুবিধা নিচ্ছে। কোনাই সম্প্রদায়সহ সরকারী তালিকার নাম বহির্ভূত অনেকে নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দের সরকারী সহায়তা নিচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত নৃ-গোষ্ঠী। নৃ-গোষ্ঠীর দেব রায় বাগদী জানালেন, বগুড়ার ১২ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এদের মধ্যে আছে কোচ, খাসিয়া, বর্মণ, মাহাতো, তেলী, তুরি, ভূঁইমালী, মালো, মাহালী, রাজোয়াড়, লোহার। সরকার নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান বাড়িঘর নির্মাণের খরচ দিচ্ছে। যাদের সন্তান উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে তার শিক্ষায় এককালীন ২৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য শিক্ষা সহায়তা দিচ্ছে। বাড়িঘরে সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল-স্যানিটেশন ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। সমতল ও পাহাড়ী এলাকার নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের সরকার সকল সূযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। যারা নৃ-গোষ্ঠী নয়, তারা নানা ছদ্মাবরণে ছলচাতুরি করে নৃ-গোষ্ঠীর সুবিধা নিচ্ছে।
×