ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওয়েবিনার

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ছিন্ন করা যাবে না

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ছিন্ন করা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কালপঞ্জিতে স্মরণীয় একটি দিন ৬ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় বিজয় অনিবার্য করেছে। সোমবার বাংলাদেশকে ভারতের কূটনৈতিক স্বীকৃতির ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, রক্তের বন্ধনে রচিত রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ছিন্ন করা যাবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শহীদ হয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসের এই আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বিরল। অন্যদিকে, নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাবিরোদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সংগঠনের সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। প্রারম্ভিক ভাষণে শাহরিয়ার বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত বাংলাদেশের ১ কোটি সহায়সম্বলহীন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠিত করেছে। দলমত নির্বিশেষে ভারতের সকল মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে একজোট ছিলেন। শরণার্থীদের বিশাল বোঝা বইতে গিয়ে তাদের অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্য শহীদ হয়েছেন। অন্য কোন দেশকে স্বাধীন করার জন্য এ ধরনের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেছিলেন নতুন রাষ্ট্রের মূলনীতি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- যা ভারতেরও আদর্শ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব অর্জিত হয়েছে রক্তের মূল্যে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এই বন্ধুত্ব উপেক্ষা করতে চেয়েছে, অস্বীকার করতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অনন্যসাধারণ অবদান। ভারতের সহযোগিতার ভেতর এরা আবিষ্কার করেছে জন্মশত্রু পাকিস্তানকে দ্বিখ-িত করার ষড়যন্ত্র। এরা বিশ্বাস করে পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বে। এরা মনে করে পাকিস্তান ইসলামের দুর্গ, ভারত হিন্দু কাফেরদের দেশ। এদেরই প্রভুরা একাত্তরে ইসলামের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা ও নারী নির্যাতনসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাধারণ মানুষ বারবার এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং আগামীতেও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যাবতীয় ষড়যন্ত্র পরাজিত করে বাংলাদেশ বিজয়ের মহাসড়কে দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতির জন্য গর্বের দিন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছিলেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে জীবনদান করেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য জনসমর্থন তৈরি করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করেন। বিজয়ের দুই মাসের মধ্যে ভারত তাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়। এভাবে ভারতের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। গত ৫০ বছরে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক- তার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। এই সম্পর্ক নাড়ির সম্পর্ক। বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছেন। বাকি বিষয়গুলোও অচিরেই সমাধান করা হবে। এ অঞ্চলের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ পৃথিবীর সকল মঞ্চে এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দুই দেশের ভেতর চলাচলের ক্ষেত্রে ভিসা প্রথা তুলে দেয়া উচিত। বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন উভয় প্রধানমন্ত্রীই ৬ ডিসেম্বরকে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। সেই হিসেবে নির্মূল কমিটি বহু বছর ধরে ‘৬ ডিসেম্বর’কে একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্মরণ করে আসছে। এ ছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতের স্টেটসম্যানের সাবেক সম্পাদক কবি পঙ্কজ সাহা, মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগীয় সম্পাদক ভারতের সাংবাদিক তাপস দাস প্রমুখ।
×