ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ

অরাজকতা সৃষ্টির নীলনক্সা জামায়াতের

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

অরাজকতা সৃষ্টির নীলনক্সা জামায়াতের

শংকর কুমার দে ॥ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী নতুন করে সরকারের পতন ঘটানোর নীলনক্সা তৈরি করে গোপন তৎপরতা শুরু করেছে। গোপনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নেতাকর্মী, ক্যাডারদের সংগঠিত ও সক্রিয় করছে দলটি। এজন্য লক্ষাধিক কর্মী নিয়োগের ছক কষেছে তারা। বিদেশ থেকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে এনজিওর মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের টাকার ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র, শ্রমিকদের গড়ে উঠা আন্দোলনে উস্কানি ও মদদ দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোর নীলনক্সা তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় গত ৬ সেপ্টেম্বর গোপন বৈঠক করার সময়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আবদুর রউফ, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত এবং জামায়াতকর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাওয়া যায়। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের সরকার উৎখাতের ছক কষে গোপন বৈঠকে মিলিত হন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি গোলাম পারওয়ারসহ নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গ্রেফতারের সময়ে তাদের কাছে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বৈঠকের আলামত হিসেবে কিছু বই, ল্যাপটপ ও ব্যানার জব্দ করা হয়। ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে। ল্যাপটপটির পাসওয়ার্ড খুলে তা পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পরীক্ষা করা হয়। জামায়াতের নেতাদের গ্রেফতারের খবরে অনেক জামায়াতে ইসলামীর নেতা গা ঢাকা দিয়েছে। আত্মগোপনে থেকে সরকার উৎখাতের জন্য নাশকতা চালানোর ছক কষে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের দাবি। পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা, ব্যক্তিসত্তা বা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এমন খবর পায় পুলিশ। বৈঠকে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বৈঠক থেকে আলামত হিসেবে কিছু বই, ল্যাপটপ ও ব্যানার জব্দ করা হয়। ল্যাপটপটির পাসওয়ার্ড না জানায় সিআইডিতে পাঠানো হবে। ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা, ব্যক্তিসত্তা বা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ শেখ হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ হাজির হলে টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে তারা। তখন জামায়াত-শিবিরের ৯ জনকে পুলিশ আটক করা হলেও বাকি অজ্ঞাতনামা আসামিরা পালিয়ে যায়। পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জামায়াত ইসলামীর উর্ধতন নেতা ও কর্মীরা দলীয় কার্যক্রমের আড়ালে এখানে গোপনে একত্রিত হয়ে সরকারবিরোধী ও বর্তমান সরকার শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে উৎখাত করার জন্য শলা-পরামর্শ করছিলেন। জামায়াত নেতাদের আটকের পর তাদের তল্লাশি করলে জব্দ তালিকায় রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন লিফলেট, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সম্পাদিত উগ্র মতবাদের বিভিন্ন বই-পুস্তকসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্টার এবং কাগজপত্র পাওয়া যায়। সরকারবিরোধী ও বর্তমান সরকারকে উৎখাতের গোপন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্বীকার করে তারা। এমতাবস্থায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও পলাতক আসামি এবং অর্থ যোগানদাতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহসহ গ্রেফতারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেয়া আবশ্যক বলে রিমান্ডের আবেদনকারী তদন্ত কর্মকর্তার লিখিত বক্তব্যে আদালতে এই ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর গ্রেফতার হওয়া সবার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময়ে জ¦ালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলা রয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম পরওয়ার ও হামিদুর রহমান আযাদ বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। জ্বালাও-পোড়াও মামলায় জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্রের ছক কষছিলÑ এমনটাই তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন। নিবন্ধন হারানোর পর ২০১৮ সাল থেকে ৩০ বছরের জন্য মাস্টার প্ল্যান নিয়ে তারা মাঠে নামে জামায়াতে ইসলামী। দলটির পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে সরকারী ও বেসরকারী খাতে লক্ষাধিক লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নের ব্যানারে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রদের একত্রিত করা। এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিচ্ছে দলটির বিদেশে থাকা কর্মীরা। বিভিন্ন এনজিওর আড়ালে অর্থ আসার তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশজুড়ে জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি চারশোর বেশি ট্রেড ইউনিয়নের কৃষক-শ্রমিক, ছাত্রদের দলে ভিড়িয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে দলটি। দলটি রয়েছে নিজেদের শিক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যও। সেখানে তরুণদের ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এজন্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন এনজিওর আড়ালে আসছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। রাজধানীর ভাটারা থেকে গ্রেফতার হওয়া দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯ শীর্ষ নেতা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সংগঠনটির পলাতক নেতাদের ধরতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পাশাপাশি জামিনে যারা রয়েছেন তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, আত্মগোপনে থাকা জামায়াত নেতারা দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাদের ম্যানেজ করে এলাকায় নির্বিঘেœ বসবাস করছেন। অভিযোগ আছে, অসাধু পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও জামায়াত নেতাদের সখ্য আছে। এর পাশাপাশি সংগঠনটির ছাত্র শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরও তৎপর রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় অঞ্চলে তাদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট। ২০১৮ সালে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এর আগে নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে দলটি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে। কিন্তু বর্তমানে টানাপোড়েনের কারণে নিজস্ব ধারার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে দলটি। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে তা-ব চালায়। পেট্রলবোমা হামলা এবং বাসে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার মতো অভিযোগ উঠে দলটির বিরুদ্ধে। নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া এবং প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যার মতো কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি জামায়াত-শিবির।
×