ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে বৃষ্টি, রাজধানীতে জনজীবনে দুর্ভোগ

জাওয়াদ দুর্বল হয়ে লঘুচাপে রূপ নিয়েছে

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

জাওয়াদ দুর্বল হয়ে লঘুচাপে রূপ নিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত দুই দিনের বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানীবাসী। বৃষ্টির মধ্যে যানবাহন সঙ্কট আর চলমান রাস্তা মেরামত কাজের জন্য রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। বিশেষ করে চলমান মেরামত কাজের কারণে রাস্তাঘাট কাদামাটিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। এতে চরম বিপাকে পড়েন অফিসগামী মানুষ। নিম্নচাপের প্রভাবে একমাত্র রংপুর বিভাগ ছাড়া সারাদেশেই সোমবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ছিল হাল্কা বাতাস। রবিবার দিনের বেলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলেও রবিবার রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। সোমবার দিনভর ঢাকাসহ সারাদেশেই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃষ্টির কারণে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়ে শ্রম ও কর্মজীবী মানুষ। এছাড়া জরুরী কাজে যারা ঘরের বাইরে বের হন তাদেরকেও সমস্যায় পড়তে হয়। গত দুই দিনের মতো সোমবারও বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল ছিল। আর গত তিন দিনেও সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, এ সময়ে পশ্চিমাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং অন্যান্য স্থানে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেছে। রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। বৃষ্টি চলে গেলে এরপর তাপমাত্রা ক্রমাগত কমে শীত জেঁকে বসতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম-এই পাঁচ বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, আরও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। মূলত বৃষ্টি ঝরিয়ে বাংলাদেশে এসে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে লঘুচাপের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি ঝরে। মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। বিকেল থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। আর নদী তীরবর্তী এলাকায় হাল্কা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি এবং শেষের দিকে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সোমবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি (২২ থেকে ৪৩ মিলিমিটার) থেকে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। উল্লেখ্য, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগ ছাড়া সব বিভাগেই বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে যশোরে, ৭৬ মিলিমিটার। ঢাকায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গণপরিবহন কম চলাচল করেছে। ফলে সোমবার সকালে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল, গুলিস্তান, রাজারবাগ ও ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় অফিসযাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় যানবাহনের জন্য ফুটপাথে বিপুল সংখ্যক মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। এ সুযোগে রিক্সা ও সিএনজির ভাড়া বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। কর্মজীবী নারী নাসরিন আক্তার বলেন, বৃষ্টির কারণে দীর্ঘক্ষণ বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর একটি রিক্সা পেয়েছি ৩০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা দিয়ে অফিসে পৌঁছেছি। রাস্তা কাটা থাকায় জামাকাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। যানজটের কারণে সময়ও লেগেছে বেশ। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘অসময়ের এই বৃষ্টি খুবই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছে। রিক্সাও ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। বাসেও ওঠার মতো অবস্থা নেই, আর অতিরিক্ত ভাড়া গুনে কোনরকম রিক্সা কিংবা সিএনজি পেলেও রাস্তায় তীব্র যানজটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ লঘুচাপে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোতে আগের মতোই ১ (এক) নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে। চরফ্যাশনে ট্রলার ডুবিতে ২১ মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচরের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর মোহনায় রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় একটি মাছের ট্রলার ডুবে ২১ মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে ১০ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- বাচ্ছু মাঝি, আলামিন মাঝি, ফারুক হাওলাদার, জাবেদ, খালেক, হাফেজ, ইউছুফ মৌলভী, জসিম জমাদার, রফিক, মাসুদ। আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াছ মাস্টার জানান, ৫ দিন পূর্বে আবদুল্লাহপুর ৪নং ওয়ার্ডের কামাল খন্দাকারের একটি মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যায়। রবিবার রাতে ফেরার পথে ঢালচরের দক্ষিণ পাশের্^ চিটাগাংয়ের একটি বড় ট্রলি ধাক্কা দেয়। এতে কামাল খন্দকারের ২১ মাঝি মাল্লাসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। সোমবার দুপুরে হাফেজ নামের এক মাল্লা ফোন করে জানান, তারা সাতজন পাথর ঘাটা এলাকায় উদ্ধার হয়েছেন। তবে ওই ফোনের পর তার ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনা শুনে ট্রলার মালিক কামাল খন্দকার অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। মাঝি- মাল্লাদের বাড়িতে বইছে শোকের ছায়া। সাতক্ষীরায় জনজীবন বিপর্যস্ত, ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ৬১ মিলিমিটার ॥ সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাতক্ষীরায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। রবিবার সকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকায়। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে স্থানীয়রা বালির বস্তা, বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন। উপকূলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশালে বৃষ্টিপাতে রবি শষ্যের ক্ষতি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে জেলায় গত দুইদিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অফিসগামী ও সাধারণ মানুষকে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিরাম ভাড়ি বর্ষণে উঠতি আমন ধান, বোরো বীজ, পানবরজ, রবিশষ্য ও শীতকালীন সবজি খেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অবিরাম বৃষ্টির কারণে মানুষ ছিল ঘরমুখী। টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে চাঁদপুরের জনজীবন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাতে চাঁদপুরে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না শহরের লোকজন। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষজনও বাড়িতে অবস্থান করছেন। শহরের রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা নেই। বৃষ্টিপাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সোমবার ভোর থেকে চাঁদপুরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টি অব্যাহত দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আলু আবাদের ক্ষতির শঙ্কা হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। শরীয়তপুরে বৃষ্টির কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব পড়েছে শরীয়তপুরেও। সোমবার সারাদিন থেমে থেমে জেলার বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি ও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারদিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনের বেলায় প্রচ- শীত অনুভূত হয়েছে। বিশেষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া হাট-বাজার ও রাস্তায় লোকজনের দেখা মেলেনি। পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে জনপদে, রবিশষ্যের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কলাপাড়ার গোটা উপকূলে জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আমন ধানের ক্ষতির শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। অনেক ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে। এখন অন্তত অর্ধেক আমন ধান কাটতে পারেনি কৃষক। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তরমুজ চাষীরা। অন্তত ৩০০ বিঘা জমির তরমুজ গাছ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ধানখালীর পশ্চিম ধানখালীতে এই দৃশ্য দেখা গেছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে জনপদে। লালুয়ার ব্যুরোজালিয়া পয়েন্টের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করে ১১ গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইলে টানা বৃষ্টিতে সরিষার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জাওয়াদের প্রভাবে টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে মির্জাপুরে সরিষার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবিরাম বর্ষণে ফুল আসা উঠন্ত সরিষা গাছ নুইয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। অনেক জমির ফুলধরা সরিষা গাছ বৃষ্টির পানিতে হেলে পড়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে। মাগুরায় বৃষ্টিপাতে পাড়া-মহল্লার সড়ক ও বাড়িতে পানি ॥ সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় গত দুইদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সোমবার ভোর থেকে মাগুরায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও বাসা-বাড়িতে পানি জমেছে। বৃষ্টির কারণে মাঠের পাকা ধান নিয়ে কৃষক বিপাকে পড়েছে। অনেক কাটা ধান মাঠে রয়েছে। শীতকালীন সবজি খেত নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টিতে ইটভাঁটির নতুন কাটা ইট ভিজে নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছে। মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। কেশবপুরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কেশবপুরে মুষলধারে বৃষ্টিতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গত তিনদিনে সারাদেশের ন্যায় কেশবপুরেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিরামহীন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উপজেলার বারী সরিষা ও বোরো বীজতলা পানিতে নষ্ট হয়ে ব্যাপক ফসলের ও ইটভাঁটির ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে রাঙ্গামাটির জনজীবন বিপর্যস্ত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ফলে সোমবার রাঙ্গামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা অবিরাম মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীত মৌসুমে হঠাৎ টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পেরে বিপাকে পড়েছে। পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলে খনন কাজের সার্ভে জাহাজ ডুবি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া পটুয়াখালী থেকে জানান, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল খননে নিয়োজিত জানডিনুল বিদেশী (বেলজিয়াম) সংস্থার একটি সার্ভে জাহাজ এক্সপ্রেস-৫৪ তলা ছিদ্র হয়ে ডুবে গেছে। সোমবার সকালে পায়রা বন্দরের ফেয়ার বয় থেকে আনুমানিক ৭ নটিক্যাল দূরত্বে রাবনাবাদ চ্যানেলের ইনার সাইটে সার্ভে জাহাজটি ডুবে যায়। তবে জাহাজে অবস্থানরত ১০ ইন্দোনেশিয়ান ক্রু এবং ২ বাংলাদেশী নিরাপদে প্রথমে একটি ফিশিং বোটে উদ্ধার হয়। পরে নিজস্ব টাগবোটের মাধ্যমে দুপুরে বন্দরে চলে আসেন। এরা সবাই নিরাপদে উদ্ধার হয়েছেন এবং সুস্থ রয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ান ক্রুরা হচ্ছেন মাস্টার আরহাম আব্দুল রহিম, চীফ অফিসার মোচামাদ রিজাল, সেকেন্ড অফিসার দারমাওয়ান, চীফ ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ নুর, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ট্রাই ইয়ান্টো, অয়েলার (১) রহমত ফাদিল্লা, এবি (১) অডি খ্রীস্টিয়ান, এবি (২) রুদি রহমান, অয়েলার (২) মুহাম্মদ আগাম ফায়েজ জুলফা, কুক জোজুয়া এনজেলবার্ট, সার্ভেয়ার সাইদুজ্জামান ইমন ও এমডি সোহানুজ্জামান সুমন। কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন, ফের পানিবন্দী দুইশ’ পরিবার ॥ স্টাফ রিপোর্টার খুলনা অফিস থেকে জানান, কয়রা উপজেলায় আবার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে শাকবাড়িয়া নদীর পানির চাপ বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে দুটি গ্রামের প্রায় দুইশ’ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহারপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ বাঁধটি শনিবার রাতে ভেঙ্গে যায়। এর পর প্লাবিত হয় হরিহারপুর ও গাতিরঘেরী গ্রাম। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, কাজের ধীর গতির কারণে এই বাঁধটি ফের ভেঙ্গে দুর্ভোগে পড়েছে কয়েকশ’ মানুষ। তারা জানান, এ বছরেই ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে হরিহরপুর গ্রামের একই স্থানে বাঁধটি ভেঙ্গে ছিল। পাঁচ মাস পর মাত্র কয়েকদিন আগে এলাকাটি পানিমুক্ত হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউর ট্রেডার্স জিও টিউবে বালু ভরে পানি মুক্ত করে। ভুক্তভোগীরা জানান, একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে শীত ও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে গাতিরঘেরী ও হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে।
×