ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন শান্তির রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রদর্শক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিকীকরণের অংশ হিসেবে রাজধানীতে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন ২০২১’। শান্তি ঘোষণাসহ ১৬ দফার মাধ্যমে সফলভাবে সম্মেলনটি শেষ হয়েছে। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজন করছে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ভাবনা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতেই বর্ণাঢ্য এই আয়োজন। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সম্মেলনে সরাসরি ও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে যোগ দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ৯০ অতিথি। এতে শান্তি রক্ষায় কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবী অংশ নেন। সম্মেলনে কোন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটির উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ত্র প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সর্বজনীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সকলকে তাদের সম্পদ ব্যবহার করার আহ্বান জানান। এছাড়া অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, বিশ্বের এই চরম সঙ্কটময় সময়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা সর্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করার আহ্বান জানাই। আসুন, আমরা সর্বজনীন শান্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ি। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, গত দুই বছরে করোনা মহামারী পুরো বিশ্ব ব্যবস্থাকে এক নতুন সঙ্কটে ফেলেছে। এই সঙ্কট প্রমাণ করেছে আমরা কেউই আলাদা নই। কাজেই, শান্তিপূর্ণভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য জাতির সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানবজাতির গভীরতম আকাক্সক্ষাগুলো অনুধাবন করেছি। ফিলিস্তিনের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বরাবরের মতো ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে আমাদের অবিচল সমর্থন রয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ১১ লাখের অধিক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর ফলে এই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাদের নিজভূমিতে ফেরানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। শান্তি ঘোষণার অংশ হিসেবে সমাপনী অনুষ্ঠানে ১৬ দফা ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। সম্মেলনে সব ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ঢাকা ঘোষণায় সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অপুষ্টি, অশিক্ষার বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আইনের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেয়া হয়। বিশ্ব নাগরিক দর্শনকে এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে- দুই দিনে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে শান্তি স্থাপন করা এবং সদস্য হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শান্তির অগ্রগতি হিসেবে সম্মেলনের থিমকে স্বীকার করা হয়। সংঘাত এড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনজুড়ে শান্তির জন্য অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদদের স্মৃতি স্মরণ করা হয় এবং গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কাছে কখনও মাথা নত নয়- অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যুদ্ধ এবং শান্তি উভয় সময়েই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রাধান্যকে মেনে চলার কথা বলা হয়। গণবিধ্বংসী সব অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি পরিত্যাগ করে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করার আহবান জানানো হয়। ঢাকা ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সুশাসন এবং আইনের শাসনের ওপর গুরুত্ব দেয়। জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার মূল্যায়ন করা হয়। জনগণের ন্যায্য দাবি ও আকাক্সক্ষার প্রতি আওয়াজ তোলা হয়। ঔপনিবেশিকতা ও অবৈধ দখলদারিত্বের নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। যে কোন অজুহাতে অননুমোদিত ক্ষমতা দখলের বিরোধিতা করা হয়। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কর্মীদের তাদের জীবন উৎসর্গের জন্য প্রশংসা করা হয়। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়। এছাড়া ‘কাউকে পিছিয়ে না রাখার’ প্রতিশ্রুতি পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। অবশ্যই নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বর্ধিত সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়। শিশুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা ও শোষণ প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শান্তি সম্মেলন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি প্রতিষ্ঠার বিশ্ব স্বীকৃতি হিসেবে জুলিও কুরি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিতে বিশ্বাসী। জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির যে রেজুলেশন, সেটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা থেকেই এসেছে। তার নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্থলসীমান্ত নির্ধারণ, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তির বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে শান্তির বার্তা দিয়েছে। আগামীতেও বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমানভাবে অবদান রাখবে।
×