ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্থ দেহ ও মনের চর্চা

প্রকাশিত: ০০:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

সুস্থ দেহ ও মনের চর্চা

শারীরিক সুস্থতায় শরীরচর্চা অপরিহার্য। সাধারণত মাংসপেশী ও সংবহনতন্ত্র সবল রাখা, খেলাধুলায় পারদর্শী হয়ে ওঠা, শারীরিক ওজন হ্রাস ও ভারসাম্য রক্ষা প্রভৃতি কারণে আমরা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকি। প্রাত্যহিক এই কাজ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি এবং মানসিক অবসাদগ্রস্ততাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল– কথাগুলো প্রায় সকলেরই জানা। তার পরও শরীর সুস্থ রাখতে, এর প্রতি একটু যতœ নিতে আমাদের যেন ভীষণ অলসতা। স্বাস্থ্যসেবীদের ভাষায় শারীরিক ব্যায়াম ‘অলৌকিক’ এবং ‘আশ্চর্যজনক’ এক ওষুধ। মাঝে মাঝে এমন অনেক জটিল রোগ দেহে বাসা বাঁধে যা কিনা সামান্য শারীরিক কসরতেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের ওপর প্রভাবের ভিত্তিতে ব্যায়ামকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। ১. এ্যারোবিক ব্যায়াম : এই ধরনের ব্যায়ামে শরীরের হৃৎপি- ও ফুসফুসসহ সামগ্রিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, হাইকিং এবং টেনিস, ফুটবল ইত্যাদি খেলা এই ব্যায়ামের প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। ২. এ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম : এক্ষেত্রে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, মাংসপেশী গঠন ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি, দীর্ঘ সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে। পুশআপ, বাইসেপ কার্লস, পুলআপ, ভারোত্তলন, ফাংশনাল প্রশিক্ষণ ইত্যাদি এ জাতীয় ব্যায়ামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ৩. ফ্লেক্সিবিলিটি/ স্ট্রেচিং ব্যায়াম : এসব ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশীর প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করে যাতে ইনজুরি বা আঘাতের প্রবণতা হ্রাস পায়। করোনা মহামারীতে শরীর চর্চার গুরুত্ব আমারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সামনে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন হাতছানি দিচ্ছে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোয় সকলের আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। এখন আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ স্বাভাবিক। ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই সকলের ব্যয়ামের সুযোগ রয়েছে, যা কয়েক মাস পূর্বেও ছিল নানা বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত। তাই এই স্বাধীনতা পুনরায় হারানোর পূর্বেই এই সুযোগ কাজে লাগানো উত্তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব হৃদরোগের প্রবণতা ১৭% বৃদ্ধি করে, বার্ধক্য অর্জন ত্বরান্বিত করে এবং স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০% বৃদ্ধি করে। শরীরচর্চার ধরন বয়স, শারীরিক গঠন, ওজন ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার ও শরীরচর্চার পরিকল্পনাও তৈরি করতে হয় একজন মানুষের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক গঠন, উচ্চতা, ওজন ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। কয়েকটি সাধারণ টিপস- * ভারি বা দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করতে চাইলে প্রথমে ভালভাবে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। * ব্যায়ামের সময় সঠিক নিয়ম ও শারীরিক ভঙ্গিমা অনুসরণ করতে হবে। * নিঃশ্বাস বন্ধ না করে ব্যয়াম করা উচিত। তা না হলে রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। * ব্যয়াম করার সময় তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। * ব্যয়ামের সময় প্রথমে হালকা সরঞ্জাম, ধীরে ধীরে সক্ষমতা বৃদ্ধির পর ভারী সরঞ্জাম ব্যবহার করুন। * প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ব্যয়াম, ক্রমান্বয়ে কঠিন ব্যয়ামের চর্চা করুন। * কার্বোহাইড্রেড, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং তরল খাবার পরিমানমত ও নিয়মিত খেতে হবে। কেননা ব্যয়াম বা কোন ভারি কাজ করার সময় কার্বোহাইড্রেড, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়। * সম্ভব হলে নিয়মিত খেলাধূলা ও সাতার কাটুন। * ব্যয়াম শেষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এছাড়াও আপনার পরিচিত ভাল শরীরচর্চাবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভুল নির্দেশনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কেননা অনেকেই সখের বশে শরীরের গঠন সুন্দর করার আশায় অপেশাদার ব্যক্তিদের পরামর্শে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন। ইতোমধ্যে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। এ সময় অনেকেই শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন। আজকাল প্রযুক্তির উৎকর্ষে প্রায় সব বয়সের মানুষই মোবাইল, টেলিভিশন বা কম্পিউটার ব্যবহারে বেশি সময় কাটান। মাঠে গিয়ে খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করার প্রবণতা দিন দিন কমে আসছে। শৈশবে প্রতিবেশি সহপাঠী, বন্ধুদের সঙ্গে শীতের সকালে শীতকালীন জামা ও জুতো পড়ে ঘুরে বেড়ানো, কৈশোরে বৃষ্টিতে ভিজে খোলা মাঠে ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে ঝাপ দিয়ে সাতার কাটা, কাটফাটা রোদে ক্রিকেট খেলার কথা এখনও আমার মনে পড়ে। আনন্দ উপভোগই ছিল এসবের মূল উদ্দেশ্য। কিন্ত এগুলোও যে শরীর চর্চার মধ্যে পড়ে, শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- একথা তখন আমার ভাবনায় বিশেষভাবে ছিল না। তাতে অপকারের চেয়ে উপকারই বেশি হয়েছে। কেননা শরীরচর্চার চিন্তাটা মাথায় ঢুকে গেলে তখন আমার কাছে এগুলোকেও রুটিন ওয়ার্ক মনে হতো। ফলে আনন্দ আনন্দ ভাবটাও হয়ত কমে আসত।
×