ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি আয়ে রেকর্ড

প্রকাশিত: ২২:৪০, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

রফতানি আয়ে রেকর্ড

শনিবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘রফতানি আয় পাঁচ দশকে ৯৬ গুণ বেড়েছে’ শীর্ষক সংবাদটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও উদ্দীপক। করোনাকালীন চরম দুঃসময় কাটিয়ে উঠে দেশের রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে ইতোমধ্যে। অবশ্য এক্ষেত্রে যথারীতি নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে ৩৪১ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার। পোশাক খাতে আগের বছরের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি রফতানি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। করোনা অতিমারীর বিপদ কাটিয়ে সারাবিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। নতুন অর্ডারও আসছে। এবার ৩৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা পূরণ হবে বলেই প্রত্যাশা। পরিবেশবান্ধব গ্রীন ফ্যাক্টরিতেও বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানে। এর বাইরে কৃষিপণ্য রফতানিতে ২৭ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রায় ১০ শতাংশ রফতানি আয় বেড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যে রফতানি আয় কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের জন্য ৪ হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিবিধ পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি মার্কিন ডলার। পণ্যের বহুমুখীকরণসহ পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে জোর দিলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অসম্ভব হবে না। আয় বেড়েছে বিদেশে জনশক্তি রফতানি করেও। করোনা মহামারীর ক্রান্তিকালেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ এবং রফতানি আয় বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত আশাজাগানিয়া বৈকি। তদুপরি বিশ্বব্যাপী করোনার এই দুঃসময়েও বাংলাদেশী শ্রমজীবীরা সৌদি আরব-ইউএইসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় প্রতিদিনই যেতে পারছেন কর্মসংস্থানের জন্য। এসবই স্ফীত করেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভা-ারকে। কঠোর লকডাউনেও পোশাক শিল্পসহ কল-কারখানা সচল রাখার এটি একটি প্রত্যক্ষ সুফল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার মজুদ ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশী মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১১ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের অন্তত অতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হলেও চলবে। অবশ্য রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ার জন্য প্রধান কৃতিত্বের দাবিদার প্রবাসী বাংলাদেশীরা। প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য বর্তমানে প্রদেয় নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। একই সঙ্গে বেড়েছে রফতানি আয়ও। তবে রফতানি ও প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হবে যে কোন মূল্যে। এর জন্য সরকারসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্পসহ কল-কারখানার মালিকদের সবিশেষ দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে, যা তারা অব্যাহত রাখবেন বলেই আন্তরিক প্রত্যাশা।
×