ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে কবি বিজয় সরকারের বসতভিটা

প্রকাশিত: ০১:৫০, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে কবি বিজয় সরকারের বসতভিটা

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল থেকে ॥ এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনিই ঠিক রবে/ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...। এই গানের রচয়িতা অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের এই দিনে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। বিজয় সরকার ১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ ফাল্গুুন নড়াইলের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকারের দুই স্ত্রী-বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউই বেঁচে নেই। সন্তানদের মধ্যে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি অধিকারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। বিজয় সরকারের প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী। সঙ্গীত সাধনার জন্য তিনি ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। এই গুণী মানুষটির বসতভিটা পড়ে রয়েছে অযতœ ও অবহেলায়। বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ করা হলেও এই সাধকের বসতবাড়ি ঘিরে সংগ্রহশালা, গবেষণা ও সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা প্রস্তাব উপেক্ষিত হওয়ায় অসন্তোষ জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ এলাকাবাসীর। কবি কণ্ঠের গান এবং সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিও রয়ে গেছে উপেক্ষিত। বিজয় সরকারের মৃত্যুর পর অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে তার বসতভিটা। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। এবার ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’, পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা এবং কবিকণ্ঠের গান পা-ুলিপি আকারে সংরক্ষণসহ বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তার জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালনের জোর দাবি জানিয়েছেন বিজয়ভক্তরা। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকার কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের বসতভিটা এখন সংরক্ষণের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিজয় সরকারের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদিতে ভবন ও বিজয় মঞ্চ নির্মিত হলেও অযতœ-অবহেলায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১২ বছর আগে ছোট্ট পরিসরে বসতভিটায় বিজয় মঞ্চ নির্মিত হলেও দেখার কেউ নেই। বিদ্যুতসংযোগ পেলেও বিজয় মঞ্চের বেহালদশা। মেঝের টাইলস ভেঙ্গে গর্ত হয়ে গেছে। ভেঙ্গেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে এই ভবনটির বেশিরভাগ অংশ। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কবির ব্যবহৃত খাটসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে, নড়াইলের আনাচে-কানাচে বিজয় সরকারের গান চর্চা হলেও স্বরলিপির অভাব রয়েছে। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন এবং সুর ও সঙ্গীত করেছেন। বিজয় সরকারের নাতি বিভাষ চন্দ্র সিকদার বলেন, কবির বসতভিটা এলাকায় বর্তমানে আমার পরিবারই বসবাস করছে। অন্যরা ডুমদি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন অনেক আগেই। কবির বসতভিটা এবং বাসভবন দেখার কেউ নেই। মেঝের টাইলস ভেঙ্গে গর্ত হয়ে গেছে। ভেঙ্গেচুরে নষ্ট হয়ে গেছে এই ভবনটির বেশিরভাগ অংশ। খুবই এলোমেলো অবস্থা। থাকার-বসার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান। চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক এসএম আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকার বাংলার গর্ব। তাকে নিয়ে দুই বাংলায় কাজ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। তিনি কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সদস্য সচিব শরফুল আলম লিটু জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অবদান রয়েছে। নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বিজয় সরকারের বসতভিটা রক্ষণাবেক্ষণসহ বিজয় সরকারের কবির স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতি সংগ্রহশালা/জাদুঘর নির্মাণ, সামাজিক পরিবেশসহ নানা উন্নয়নের কথা জানালেন। এদিকে, ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’, পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা এবং কবিকণ্ঠের গান পা-ুলিপি আকারে সংরক্ষণসহ বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তার জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালনের জোর দাবি জানিয়েছেন বিজয়ভক্তরা।
×