ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে উঠবে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

তৈরি হচ্ছে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান ॥ পায়রা ও কুয়াকাটা উন্নয়নের টার্গেট

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

তৈরি হচ্ছে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান ॥ পায়রা ও কুয়াকাটা উন্নয়নের টার্গেট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ পায়রা সমুদ্র বন্দর ও নয়নাভিরাম সাগর কন্যা কুয়াকাটাকে ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে-আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটন স্থাপনা, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাভিত্তিক কার্যক্রম। পুরো মাস্টারপ্ল্যান মনিটরিং করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী ২০ বছরের মধ্যে এ মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পাশাপাশি পায়রা ও কুয়াকাটা নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে আইনের একটি খসড়া করা হয়েছে। আইনটি অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে কর্তৃপক্ষ গঠনের গেজেট জারি করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকারের করা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী একটি আধুনিক বন্দরনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে পায়রাকে। একইসঙ্গে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে কুয়াকাটার উন্নয়ন করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে যাবে। এতে কুয়াকাটা পরিণত হবে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরীতে। বন্দরনগরী ও পর্যটননগরী মিলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির গতিধারা বদলে যাবে। সূত্রমতে, ‘পায়রা বন্দরনগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ মহাপরিকল্পনাটি করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সাত উপজেলা-পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী এবং বরগুনার সদর, আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটাকে এ মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার আবাসন, পর্যটন, জীবিকা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক, নগর উন্নয়ন অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ পরিকল্পনাবিদ শরীফ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় আগামী ২০ বছর পর্যন্ত সরকারের যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো নিয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এরপর সেই মাস্টারপ্ল্যানটি তুলে দেয়া হবে পায়রা-কুয়াকাটা নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। তিনি আরও বলেন, মাস্টারপ্ল্যানে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে সেগুলোকে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যে এনে ভৌত অবকাঠামো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর বরগুনা ও পটুয়াখালীর সাত উপজেলা নিয়ে গঠন করা হবে ‘পায়রা-কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। ওই কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হবে এ উন্নয়ন পরিকল্পনা। মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক বন্দরনগরী গড়ে তোলা। উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব সমুদ্রবন্দর গড়ার মাধ্যমে ইকোট্যুরিজমের বিকাশ ঘটানো এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা। জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার এমবি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় রাঙ্গাবালির সোনার চরকে বিদেশী পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করে গড়ে তোলা এবং কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে পায়রা ও কুয়াকাটাকে ঘিরে মহাউন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ২৭ সদস্যের সমন্বয় কমিটি করা হয়। সূত্র মতে, পায়রা-কুয়াকাটা কমপ্রিহেনসিভ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে ওই সমন্বয় কমিটি সস্প্রতি সভা করেছেন। ১১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর খাতভিত্তিক পরিকল্পনা নগর উন্নয়ন অধিদফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা এবং ব্লু-ইকোনমি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তারা সেখানে শেরেবাংলা ঘাঁটি স্থাপন করছেন। এছাড়া নৌ-বাহিনীর এয়ারস্ট্রিপ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। এ কাজের জন্য ৬১৭ একর জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। পায়রায় ৩২৭ কোটি টাকা আয় ॥ পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ৩২৭ কোটি টাকা। এ সময়ে বন্দরে ১৬২টি জাহাজ চলাচল করেছে। বন্দরের মূল চ্যানেলে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইড্রোগ্রাফ সার্ভে জাহাজের মাধ্যমে নিয়মিত সার্ভে হচ্ছে। মাল্টিপারপাস ভবন, ওয়ার্কশপ ও পঞ্চমতলা অফিসার্স কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) মাধ্যমে পায়রা বন্দরের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
×