ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানির জ্বালানি তেল আর লাইটারিং করতে হবে না

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

আমদানির জ্বালানি তেল আর লাইটারিং করতে হবে না

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ সরকারী উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পসমূহের মধ্যে অন্যতম গভীর সমুদ্র তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন বসিয়ে উপকূলে মূল পরিশোধনাগারে আমদানির জ¦ালানি তেল নিয়ে আসা। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) সূত্রে জানা গেছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পাইলট জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি রয়েছে এই পয়েন্ট থেকে ইআরএল (ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড) পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার ডবল পাইপলাইন স্থাপন। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের নাম ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ডবল পাইপলাইন। টার্গেট অনুযায়ী আগামী বছর ২২ আগস্ট এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। সূত্র জানায়, সমুদ্র তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের মতো এটিও একটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মাদার ট্যাঙ্কযোগে আমদানির জ¦ালানি তেল আর লাইটারিং করতে হবে না। এই লাইটারিং পদ্ধতির অবসান হলে বিপিসি তথা সরকারের বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১ লাখ বা এর অধিক ক্ষমতার ক্রুড অয়েলবাহী মাদার ট্যাঙ্কার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছার পর সেখান থেকে লাইটারিং কাজে ব্যবহৃত হয় বিএসসি’র (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন) জাহাজ। এই লাইটারিং কাজে বছরে বর্তমানে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা বিপিসিকে দিতে হয়। এত বিশাল অর্থের ব্যয় অবসান জ¦ালানি মন্ত্রণালয় বিপিসির উদ্যোগে দেশে আমদানিতব্য অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ¦ালানি তেলের খালাস কার্যক্রম আরও সহজতর এবং গতিশীল করার লক্ষ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় সমুদ্রবক্ষে ভাসমান জেটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। একটি মাদার ভেসেল থেকে ১ লাখ টন তেল খালাসে সময় নেয় সর্বোচ্চ ১১ দিন। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খালাস কাজে সময় নেবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা। একদিকে বিশ^জুড়ে প্রাণঘাতী করোনার আবির্ভাব, অপরদিকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ গভীর সমুদ্র তলদেশ দিয়ে চীনা বিশেষজ্ঞদের ডবল পাইপলাইন বসানোর কাজ থেমে থাকেনি। ভাসমান প্ল্যাটফর্ম থেকে পতেঙ্গার ইআরএল পর্যন্ত এর দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৭৪ কিলোমিটার ডবল পাইপলাইন স্থাপন হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে ৭৪ কিলোমিটারব্যাপী স্থলভাগে পাইপলাইন বসানোর কাজ। বিপিসি সূত্র জানায়, সমুদ্রবক্ষে ভাসমান আনলোডিং ফ্যাসিলিটি স্থাপন এবং সেখান থেকে সাব-সী পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল সরাসরি রিফাইনারি শোর ট্যাঙ্ক ফার্মে এবং পরিশোধিত জ¦ালানি তেল তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির মূল স্থাপনার ট্যাঙ্ক ফার্মে গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর কাজ শুরু হয়ে গেলে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের লাইটারিংয়ের যুগ যুগের পদ্ধতির অবসান ঘটবে। বিপিসি সূত্র আরও জানিয়েছে, দেশের ডিজেল, পেট্রোলের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে জ¦ালানি তেলের একমাত্র পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা যায় তিন ভাগের এক ভাগ। বাকি পরিশোধিত তেল অপেক্ষাকৃত বেশি দামে আমদানি করে নিয়ে আসে বিপিসি। আমদানির পুরো তেলই আসে সমুদ্রপথে। চীনের ঋণ সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। মাদার ট্যাঙ্কার থেকে প্রথমে তেল স্টোরেজ হবে মাতারবাড়িতে সমুদ্রবক্ষে নির্মাণাধীন দুটি স্টোরেজ ট্যাঙ্কে। একটি পরিশোধিত ও অপরটি অপরিশোধিত তেলের জন্য ট্যাঙ্ক দুটি থেকে পাইপলাইন সংযুক্ত হবে রিফাইনারির পরিশোধনাগার পয়েন্টে। সমুদ্র তলদেশে যে ডবল পাইপলাইন বসেছে এর প্রতিটির ব্যাস ৩৬ ইঞ্চি। আর স্থলভাগে যে পাইপলাইন বসবে তার ব্যাস হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর ২২ আগস্ট এই মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে বলে বিপিসি সূত্র আশা করছে। ফলে যুগ যুগের আমদানির জ¦ালানি তেল খালাসের পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে মাদার ভেসেল প্রবেশের সুযোগ না থাকার কারণে সরকারকে সমুদ্রবক্ষে জেটি আকারে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করে তলদেশ দিয়ে ডবল পাইপলাইন বসানোর কাজ হাতে নিয়েছে।
×