ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নে পাকিস্তান আমাদের ধারে কাছেও নেই

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

উন্নয়নে পাকিস্তান আমাদের ধারে কাছেও নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, স্বাধীনতার মাসে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করার মতো একটি দিবস পেয়েছি। এটি আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন, স্বাধীনতা পেয়ে কী পেলেন? আজকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়? পাকিস্তান আমাদের ধারে কাছে নেই। তারা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। আর আমাদের রাষ্ট্র উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে বলে বুঝতে পেরেছি পাকিস্তান কোথায় আর বাংলাদেশ কোথায়? শনিবার দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২১ উদ্যাপন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘পাকিস্তানের কথা আর মুখেও আনবেন না। আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করতে পেরেছেন বলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে পারছি।’ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘এ বস্ত্র খাতের অবস্থা আগে কী ছিল? আমরা ছোটখাটো দোকান করতাম। আমার বাবা প্রায় চট্টগ্রাম যেতেন করাচী থেকে আসা জাহাজের পণ্য কিনতে। আমাদের দেশে কোন ধরনের কাপড় তৈরি হতো না। সবকিছু সেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসত। তখন বাংলাদেশ থেকে এক ডলারও এক্সপোর্ট হতো না। স্বাধীন হয়েছে বলে এই শিল্প এগিয়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, যারা বস্ত্রশিল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন। আজকে পোশাক শিল্প হয়েছে বলে অন্যান্য শিল্প চালু হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রথম দিকে তাঁত ছিল, টেক্সটাইল মিলস ছিল না। বস্ত্র খাত আগেই বেড়েছে, আস্তে আস্তে টেক্সটাইল মিলস গড়ে উঠেছে। একসময় আমরা সুতা আমদানি করতাম। এখন সুতাও তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে। আস্তে আস্তে সব শিল্প আমাদের দেশে গড়ে উঠছে। সুতরাং বস্ত্র খাত আগে বাড়লে, কতগুলো খাতের উন্নয়নও বাড়ে। যখন একটা কারাখানা গড়ে ওঠে তখন হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ পায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা দিয়েছেন পোশাক শিল্পকে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এত টাকা দিয়ে দেয়া হলো ওদেরকে। তারপর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য শিল্পদের কেউ দেখেছেন। প্রত্যেক শিল্পকে প্রধানমন্ত্রী কোন না কোন সহযোগিতা করেছেন। আজকে পোশাক শিল্প প্রণোদনা পেয়ে চালু ছিল বলে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজকে প্রত্যেকটা গার্মেন্টস অর্ডার দিয়ে কূল করতে পারছেন না। অর্ডারের পর অর্ডার আসছে। এটির মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’ গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, ‘সেই সময় যদি প্রধানমন্ত্রী আপনাদের প্রণোদনা না দিত তাহলে আপনারা ঘুরে দাঁড়াতে পারতেন না। প্রধানমন্ত্রী সেই সময় উপলব্ধি করতে পেরেছেন দুর্দিনে শিল্পকারখানাকে বাঁচিয়ে না রাখি তাহলে আমার দেশ গড়ে উঠবে না। একেই বলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার মতো দেশকে ভালবেসে এই কাজগুলো করে যাচ্ছ। শিল্প দিয়ে রেভিনিউ আসছে। যত শিল্প গড়ে উঠবে তত রেভিনিউ আসবে। উন্নয়ন করতে হলে শিল্পক্ষেত্রে রেভিনিউ আনতে হবে। আগে দেখেন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু তৈরি করতে চেয়ে বিশ্বব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকার জানায়। তখন তিনি নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করেছেন। কত বড় সাহস লাগে!’ তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় মসলিন হাউস তৈরি করেছি। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে মসলিন কাপড় উদ্ধার করতে বলেছিলেন। জামদানি ও মসলিন এই দুইজন বোন। ১৭০ বছর আগে মসলিন হারিয়ে যায়। এটা কেউ উদ্ধার করেননি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে আমরা আবারও মসলিন কাপড় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের জন্য বিরাট গর্বের। তিনি বলেন, আপনারা এই মসলিন হাউসে আসলে দেখতে পারবেন কিভাবে চরকায় কেটে সুতা তৈরি হয়। আগে ৫০০ কাউন্টের কাপড় হতো এখন আমরা সেটা বাড়িয়ে ৭০০ কাউন্ট পর্যন্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি আপনারা সে প্রযুক্তি দেখবেন এবং বেসরকারী খাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে জনসাধারণের কাছে সাশ্রয়মূল্যে পৌঁছাতে পারবেন। বেসরকারী উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করলে কম দামে বিশ্বের মানুষ আবার মসলিন কাপড় পাবে। এদিন পোশাক শিল্প ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ৭ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক, এমপি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান, বিটিএমইএ-এর সভাপতি আলী খোকন, বিকেএমইএ-এর হাতেম আলী, বিজিবিএ সভাপতি ইফতেখার হোসাইন, বিএসটিএমপিআইএ সভাপতি আজিজুল হকসহ আরও অনেকেই। পুরস্কার পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস এ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ), বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস্ এ্যান্ড পাওয়ার লুম ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিএসটিএমপিআইএ), বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল এ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতি।
×