ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৃষিযন্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৃষিযন্ত্র ব্যবহার বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং ব্যবহার বৃদ্ধি বিষয়ক এক কর্মশালায় শনিবার ব্রি সদর দফতরের প্রশিক্ষণ ভবনের ভিআইপি সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেজিএফ- বিকেজিইটি এর অর্থায়নে পরিচালিত সিজিপি প্রকল্প ’ ভ্যালিডেশন এ্যান্ড আপস্কেলিং অফ রাইস ট্রান্সপ্লান্টিং এ্যান্ড হারভেস্টিং টেকনোলজি ইন দ্যা সিলেক্টড সাইটস অব বাংলাদেশ (ভিআরটিএইচবি)’ এর এই প্রারম্ভিক কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেজিএফ ( কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। এছাড়াও কর্মশায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রির পরিচালক ( প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক এবং ব্রির পরিচালক ( গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জমান। প্রকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং এফএমপিএইচটি বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনোয়ার হোসেন। প্রকল্প প্রস্তাবনার ওপর প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হামিদুল ইসলাম। কর্মশালায় বিশেষজ্ঞগণ জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধানাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। কর্মশালায় জানানো হয়, এ প্রকল্পেন আওতায় ব্রি উদ্ভাবিত রাইস ট্র্র্যান্সপ্লান্টার কাম সার প্রয়োগযন্ত্র, ব্রি শক্তিচালিত আগাছা দমন যন্ত্র এবং কম্বাইন হারভেস্টও যন্ত্র মূল্যায়ন, বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং প্রস্তাবিত যন্ত্রসমূহ জনপ্রিয়করণ করা হবে। ব্রি উদ্ভাবিত রাইস ট্র্যান্সপ্লান্টার কাম সার প্রয়োগ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ ও সকল সার একসাথে প্রয়োগ করা যায়। ফলে কৃষকের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হয় এবং ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও ধান উৎপাদনে বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমগুলির মধ্যে আগাছা দমন ব্যবস্থাপনা অন্যতম। মওসুম এবং এলাকা ভেদে মোট ধান উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৩০-৩৫% আগাছা দমন ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করতে হয়। কাঙ্খিত মাত্রায় ফলন পেতে হলে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করা প্রয়োজন। আগাছা দমনে কায়িক শ্রম লাঘব, সময় এবং ব্যয় হ্রাস করার লক্ষ্যে ব্রির শক্তি চালিত নিড়ানী যন্ত্রটি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করা হয়েছে। উক্ত যন্ত্রের মাধ্যমে একসাথে একাধিক সারির আগাছা দমন করা সম্ভব। এই যন্ত্রটি জনপ্রিয়করণ করা সম্ভব হলে ধানের আগাছা দমনে রাসায়নিক আগাছা নাশক ব্যবহার হ্রাস পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। তাছাড়া বর্তমান সরকারের ভর্তূকি কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন মডেলের কম্বাইন হারেভেস্টার বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। সেইসব মডেল হতে শস্য, জমি এবং কৃষকের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ভালো মডেল নির্বাচন করাও একটি কঠিন কাজ। উক্ত প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প এলাকার শস্য, শস্য বিন্যাস, মাটি এবং কৃষকের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে সঠিক মডেলের কম্বাইন হারভেস্টার নির্বাচন এবং বিসনেজ মডেল প্রস্তুত করা হবে। আলোচকরা জানান , কৃষির মানোন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে ফসল উৎপাদনে লাগসই কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার অর্থাৎ কৃষি যান্ত্রিকীকায়ণ এখন সময়ের দাবি। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন। এটি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রকৃতি নির্ভর কৃষিকে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা ও শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করে তা টেকসই করতে হবে। কৃষিকে লাগসই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও যান্ত্রিকীকরণের ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।
×