ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল নক্সায় তৈরি সেতু ভেঙ্গে ফেলা হতে পারে

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

ভুল নক্সায় তৈরি সেতু ভেঙ্গে ফেলা হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ভুল নক্সার কারণে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝিকরগাছার আলোচিত ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলার দিকেই সিদ্ধান্ত গড়াচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে এবং পাশাপাশি আরেকটি ব্রিজ নতুন নক্সায় দাঁড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজারের কপোতাক্ষ নদের ওপর এ ব্রিজটি নির্মাণে কোন নিয়মনীতি মানা হয়নি বলে সড়ক বিভাগ ও বিআইডাব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সূত্রের দাবি। নদী আইন অনুযায়ী কপোতাক্ষের পানি স্তর থেকে ব্রিজটি ২৫ ফুট উচ্চতায় হবার কথা থাকলেও নির্মিত হয়েছে মাত্র সাড়ে আট ফুটে। যা বিআইডাব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করে লাল কালির দাগ দিয়েছে। যে কারণে বর্ষাকালে এ ব্রিজের নিচ দিয়ে কোন ট্রলার তো দূরের কথা, ডিঙি নৌকাও যেতে পারবে না। এছাড়া, ব্রিজ নির্মাণের জরিপও ভুল ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে নির্মাণ কাজে নেয়া হয়নি নৌ সংরক্ষণ ও সঞ্চালন বিভাগের কোন অনুমতি বা ছাড়পত্র। কপোতাক্ষ নদের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি বয়সের ভারে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটি ভেঙ্গে নতুন ব্রিজ করার পরিকল্পনা করে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে দাতা সংস্থা জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) নতুন ব্রিজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়। ১২০ দশমিক ২০ মিটার বা ৩৯১ ফুট দৈর্ঘ্যরে ছয় লেনের এ ব্রিজের নক্সা চূড়ান্ত করা হয়। এখানে ১৫ দশমিক ১ মিটার বা প্রায় ৫১ ফুট প্রশস্তের পাশাপাশি দুটি ব্রিজের নক্সা করা হয়। মাঝখানে তিন মিটারের বা দশ ফুটের একটি ডিভাইডার রাখা হয়। যেটি দুই সেতুর মাঝখানে সংযোগ স্থাপন করবে এবং তিন লেন করে পাশাপাশি দুটি সড়ক পৃথক করবে। ব্রিজে মোট তিনটি স্প্যান ও পানি থেকে উচ্চতা (সফিট লেভেল) রাখা হয়েছে ৬ দশমিক ৩৫০ মিটার বা প্রায় ২১ ফুট। ভেঙ্গে ফেলা পুরাতন ব্রিজটির উচ্চতা ছিল প্রায় ২০ ফুট। ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর আওতায় এসব কর্মকা- শুরু হয়। এ কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয় ওসিজি-ওসি-পেডিকো-জেভি ইন এ্যাসোসিয়েশন উইথ এসএমইসি-জেবিএসএল-বিসিএল-এসিই-ডিডিসি। পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে সেতুর ঠিকাদার নিয়োগ হয় ঢাকার কাকরাইল এলাকার মনিকো-ডায়ানকো জেভি লিমিটেড। এ ব্রিজ নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ৭০ কোটি টাকা। টেন্ডার অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১৯ নবেম্বর থেকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হবার মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের ২৫ মে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি অংশের ব্রিজ নির্মাণ করে বিতর্কের জন্ম দিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছেন। এ কারণে গত প্রায় আড়াই মাস এ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। নক্সা ও নিয়মানুযায়ী ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব) ডাঃ নাসির উদ্দীনসহ জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজটি পরিদর্শনে গিয়ে বাস্তব অবস্থা দেখে গত ৮ আগস্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগের পর জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিসি, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেকসহ কর্মকর্তারা এবং জাইকা প্রতিনিধিরা নির্মাণাধীন ব্রিজটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা তদন্ত শেষে গত অক্টোবর মাসে তদন্ত রিপোর্ট ও তাদের সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।
×