ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ মনির ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ২১:১০, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

শেখ মনির ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিববাহিনীর অধিনায়ক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৯ সালে ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম শেখ নূরুল হক বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বোন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ মনি ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে যুব রাজনীতির সূচনা করেন। শেখ ফজলুল হক মনি ব্যক্তি জীবনে ২ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মনি শাহাদাৎবরণ করেন। শেখ মনি ঢাকা নব কুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন ১৯৫৮ সালে। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। শেখ ফজলুল হক মনি কেবল রাজনীতি নয়, সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায়ও অবদান রাখেন। তাঁর ‘অবাঞ্ছিতা’ উপন্যাস পাঠক সমাদৃত। দৈনিক বাংলার বাণী, ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বিনোদন ম্যাগাজিন ‘সিনেমা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। শেখ মনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং ১৯৬৩ সালে আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা একটি নাম শেখ ফজলুল হক মনি। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করেন শেখ মনি। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী হরতাল সফল করে তোলার ভূমিকায় ছিলেন শেখ মনি। ছয় দফা আন্দোলনে এ অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে দেশমাতৃকার টানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ মনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের মুক্তিকামী যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন মুজিব বাহিনী। তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক। শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তিনি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অস্থির যুবসমাজকে সৃজনশীল খাতে প্রবাহিত করতে। যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল যুবলীগ, সেই শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে এখন যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ মনির ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। শেখ ফজলুল হক মনির জন্মদিন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নিয়েছে যুবলীগ। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বেলা ১১টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ ফজলুল হক মনি; সৃষ্টিশীল তারুণ্যের প্রতীক’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল। শুক্রবার বাদ জুমায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×