ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাল সবুজের মহোৎসবে শিশুদের বর্ণিল পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

লাল সবুজের মহোৎসবে শিশুদের বর্ণিল পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্ত আকাশ আর জলের ধারাকে সাক্ষী রেখে উচ্চারিত হলো বাঙালীর বীরত্বগাথা। সেই বীরত্বের উল্টোপিঠে শিল্পের আশ্রয়ে প্রকাশিত হলো ষড়ঋতুর সৌন্দর্যময় বাংলার দৃশ্যকল্প। শিশু-কিশোরদের গানে সুরে সুরে উদ্্যাপিত হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। পরিবেশনার পাশাপাশি দর্শক-শোতাও ছিল শিশুরাই। আর এভাবেই বর্ণিল রূপ পেল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে হাতিরঝিলের এ্যামফিথিয়েটারে চলমান ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল সবুজের মহোৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার ছিল এফবিসিসিআই আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন। হালকা হিমমাখা হেমন্ত রাতটি রঙিন হয়ে শিশু-কিশোরদের হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনার বিশেষ দিনে। এতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত শিশুরা অংশ নেয়। বাংলার ষড়ঋতুসহ দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন গেন্ডারিয়া কিশালয় কচিকাচার মেলার শত শিশু শিল্পী। প্রায় এক ঘণ্টার নাচ-গানের পরিবেশনায় মাতিয়ে রাখে তারা। শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে তারা গেয়ে শোনায়Ñ জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে নিশ্চয়/কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে/জেগে ওঠার এই তো সময় ...। এই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ করে আরেক দল। নেপথ্যে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা অধ্যায়। পরের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ‘গ্রীষ্ম বর্ষা শরত হেমন্ত শীত বসন্ত’। এই গানের সুরে নৃত্যশিল্পীরা ফুল, পাখির সঙ্গে ছাতা মেলে নাচ করে। এভাবেই পুরো আয়োজনটি এগিয়ে চলে নাচ-গানের সম্মিলনে। ষড়ঋতুনির্ভর পরিবেশনার মাঝে বয়ে যায় মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়। মনোমুগ্ধকর নাচের সঙ্গে ব্যাকড্রপ স্ক্রিনের আকাশে ভেসে বেড়ায় শরতের নীলাকাশ। দুলতে থাকে শ্বেতশুভ্র কাশফুল। এভাবেই নানা অনুষঙ্গের আশ্রয়ে প্রতিটি ঋতুই উঠে অনিন্দ্য সুন্দর উপস্থাপনায়। তাদের সেই পরিবেশনায় মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দর্শকসারি থেকে বারংবার ঝরে পড়ে করতাালি। গ্যালারিজুড়ে ছড়িয়ে ছিল জাগো ফাউন্ডেশনের এক হাজার শিশু-কিশোর শ্রোতা-দর্শক। শিশুদের পরিবেশনা শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল স্পন্দন ও ধ্রুবতারা। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্র্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান। দর্শকসারিতে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তোমরা আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান শিখবে, কবিতা আবৃত্তি করবে, বিতর্ক করবে। তোমাদের আনন্দ নিয়ে পড়াশোনার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই বক্তব্যে শিশু-কিশোররা করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। সালমান এফ রহমান বলেন, বিজয়ের ৫০ বছর আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ববহ। কারণ, এই দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমরা কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম না। ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোন পরিচয়ও আমাদের হতো না। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে এই সময়টি আর আসবে না। সে কারণেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই বিজয়ের মাসের শুরু থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত আমাদের এই বিজয় উদ্যাপন করব। এদিনের পরিবেশনা পর্বে উপস্থাপিত আরও কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিলÑ ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে/আয় রে আয় আয়’, ‘বাজেরে বাজে ঢাক/এলো বৈশাখ’, ‘শিউলিতলায় ভোরবেলায় পুষ্প কুড়ায় পল্লী বালা’, ‘আমার মাইজা ভাই সাইজা ভাই কই গেলারে’। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনের আয়োজনে পরিবেশিত হবে নারীদের বিশেষ অনুষ্ঠান। শনিবার হবে নজরুল উৎসব। ৫ ডিসেম্বর রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর থাকছে নৃত্য উৎসব। ৭ ডিসেম্বর অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠানে গাইবেন ঢাকা ও ময়মনসিংহের শিল্পীরা। ৮ ডিসেম্বর উপস্থাপিত হবে চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের শিল্পীদের পরিবেশনা। ৯ ডিসেম্বর পরিবেশনা উপস্থাপন করবে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর খুলনা ও সিলেট বিভাগ। ১১ ডিসেম্বর থাকবে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান। ১২ ডিসেম্বর থাকবে লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। ১৩ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র তারকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশিত হবে মঞ্চনাটক। ১৫ ডিসেম্বর কনসার্ট। ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
×