ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধাশ্রম ॥ আবদুল মুকিত ॥ মুখতারের নতুন দিগন্ত

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

বৃদ্ধাশ্রম ॥ আবদুল মুকিত ॥ মুখতারের নতুন দিগন্ত

আবদুল মুকিত মুখতার কবি ও গবেষক। তিনি জীবনকে দেখেন একনিষ্ঠ সাহসী, অনসন্ধানী- সংবাদকর্মীর চোখে। তিনি কথা বলেন, সমালোচকের একাগ্রতার প্রচ- মুন্সিয়ানা ও বিদ্বজ্জনের ভাষায়। ফলে তার সৃষ্টি ও কর্ম-কুশলতা দাঁড়িয়ে যায় সমাজ সংস্কারের পক্ষে। তবে বেদনা তাকে ব্যথিত করলেও অদম্য করতে পারে না। সাহিত্যের শাশ্বত উদ্দেশ্যই তার সাধনা। আবদুল মুকিত মুখতার কর্মচাঞ্চল্যময় প্রবাস যাপন করেছেন সুদূর ইংল্যান্ডে। তার প্রথম কবিতার বই যখন তখন তিনি প্রবাসে। ৪০ বছরের সাহিত্য জীবনে তিনি ৪টি কবিতার বই, একটি গল্পের বই, একটি জীবনীগ্রন্থসহ মোট ৬টি গদ্যগন্থ রচনা করেছেন। অর্থাৎ মন্মনের চেয়ে তন্ময়ের পাল্লাই তার ভারি। এই ওজন শুধু সংখ্যায় নয় বিষয়-বৈচিত্র্যেও প্রশংসীয়। মুকিত মুখতার কবি, গবেষক হিসেবে যেখানে অসুন্দর-অসঙ্গতি দেখেন, সেখানেই তার ক্যামেরার চোখ আটকে যায়। বৃদ্ধাশ্রম তারই অথচ কঠিন বাস্তব এবং যথাসত্য চিত্র। আধুনিক সভ্যতার ও বদলে যাওয়া জীবনের এক নিষ্ঠুর চলচ্চিত্রের নাম বৃদ্ধাশ্রম। কেন এই বৃদ্ধাশ্রম? যুগে যুগে ইতিহাসে বৃদ্ধাশ্রম। পরিবার বা মা-বাবার যৌথ দায়িত্ব, সন্তান গঠনের কৌশল, সমাজের ¯্রােতধারা, প্রচলিত সংস্কৃতি, ভোটের ষড়যন্ত্র, নেতৃত্বের কোন্দল, স্ত্রীর মর্যাদা ও কর্তব্য, পুত্র ও পুত্রবধূর দায়িত্ব ও কর্তব্য- মডার্ন পুত্রবধূ, ফতোয়াবাজি, বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। যৌতুক প্রথা দেশে-বিদেশে হিন্দু বিয়ে, খ্রীস্টান বিয়ে মুসলিম বিয়ে? ভালবাসার দ্বন্দ্বই আজকের বৃদ্ধাশ্রম। মোটকথা বৃদ্ধাশ্রম বিষয়ে একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম সৃষ্টি হয়েছে আবদুল মুকিত মুখতারের মানবিক হাতের মুন্সিয়ানায়। জ্ঞানের গভীরতায়... গবেষক আবদুল মুকিত মখতার তার বইটির মুখবন্ধে বলেন, পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই অনুশোচনার কেন্দ্র করেই ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর মাসের শুক্রবার বৃদ্ধাশ্রম রচনা শুরু এবং ২৬ অক্টোবর ২০২০ সালে সম্পন্ন হয়েছে। অনেক বাস্তব ঘটনার উদ্ধৃতি সন্বিবেশিত করা হয়েছে। এমন অনেক সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা, স্বামী-স্ত্রী ও বউ-শাশুড়ির কথা প্রতি কথা বর্ণিত হয়েছে। যাতে একে অন্যের প্রতি মনোক্ষুণœ কিংবা সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। অনেক হয়ত অপ্রিয় সত্যকে গ্রহণ করতে না পেরে গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ হতে পারেন। মূলত দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার ও সংশোধনের চেষ্টা করতে গেলে প্রতিষ্ঠিত স্বার্থসংশ্লিষ্ট শক্তি ও তাদের পদলেহী তাঁবেদার ক্ষেপে যাবেন, মারমুখী হবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা সবাই জানি সত্য সব সময় অপ্রিয় হয়ে থাকে। তাই বলে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেমে থাকে না। থেমে যায়ও না। ব্যক্তি জীবনে আবদুল মুকিত মুখতার একজন সত্যনিষ্ঠ সংবাদকর্মী হওয়ার কারণে নির্মোহ দৃষ্টি দিয়ে সমাজের নগ্ন চিত্রগুলো উপস্থাপন করতে পেরেছেন। আবার গবেষকের চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন গহ্বরের পঙ্কিলতার নির্যাস। তার সৃষ্টিশীল গদ্য-পদ্য আলোর পক্ষে-ভালোর পক্ষে দাঁড়ায় সাহসের সঙ্গে। সমাজ ভাঙে, ভাঙে সুখের ঘর। তারপর তারা খরপোড়া আগুনে আলু পুড়ে খাওয়ার জন্য শর্তযোগ্য দাতব্যসেবার মেতে ওঠে। মানুষ তখন বুড়ো হয়ে যায়, বুড়িয়ে যায়। মা থাকেন না, বাবা থাকেন না। থাকে শুধু বৃদ্ধাশ্রম নামক সুগ্রন্থিত সুমুদ্রিত একটি বইটি। বইটি পাঠিকা-পাঠকদের মনে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ^াস। সে জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রসার জরুরী মনে করি। একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হবেন কবি, গবেষক আবদুল মুকিত মুখতার। সৃজনশীল এই লেখকের সঙ্গে পাঠক সমাজকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য প্রকাশককে আন্তরিক ধন্যবাদ। বইটি প্রকাশ করেছেন বাসিয়া প্রকাশনীর প্রকাশক মোহাম্মদ নওয়াব আলী। ইঙ্গিতময় দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। ২৯৬ পৃষ্ঠার এ বইটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫০ টাকা। বইটির গেটআপ, সেটআপ, মেকআপ বেশ চমৎকার। মানানসই। বাঁধাইও ভাল। ‘বৃদ্ধাশ্রম’ বইটির বহুল প্রচার-প্রসার, পাঠকপ্রিয়তা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
×