ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এলাকায় ঝাড়ু মিছিল ॥ জানাজা ছাড়া লাশ দাফন

এবার বন্দুকযুদ্ধে প্রধান আসামি নিহত

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

এবার বন্দুকযুদ্ধে প্রধান আসামি নিহত

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লা সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি শাহ আলম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। কুমিল্লা সদরের চাঁনপুর গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী শাহ আলম নিহত হওয়ার খবর বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগরীর সুজানগর-সংরাইশ এলাকায় জনতা মিষ্টি বিতরণ করে। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তার মা ও স্ত্রী ছুটে আসলে স্থানীয় মহিলারা তাদেরকে ধাওয়া করে বলে জানা গেছে। এছাড়া ক্ষুব্ধ জনগণ শাহ আলমের লাশ এলাকায় নিয়ে দাফনে বাধা সৃষ্টি করে এবং ঝাড়ু মিছিল করে। জানাজা ছাড়াই বিকেলের দিকে শাহ আলমের লাশ পুলিশ প্রহরায় টিক্কারচড় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে এ মামলার আসামি সাব্বির ও সাজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে জানাজা ছাড়াই তাদেরও দাফন করা হয়। পুলিশ জানায়, কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহা হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শাহ আলম চাঁনপুর গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার গভীর রাতে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম তাকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে চাঁনপুর গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকায় ডিবি ও থানা পুলিশের টিম পৌঁছালে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে শাহ আলমকে (৪০) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি ৭.৬৫ পিস্তল, গুলি-কার্তুজের খোসা উদ্ধার করে। কে এই শাহ আলম ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার মৃত জানু মিয়ার ছেলে শাহ আলম। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। শাহ আলমের স্ত্রী ও দেড় বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান শাহ আলম এক সময় কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেলের নিকটের লোক ছিল। এলাকায় মাদক ব্যবসায় বিরোধের কারণে কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেলের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। শাহ আলমের উত্থান ॥ জেলা ডিবি পুলিশের এসআই পরিমল চন্দ্র দাস জানান, ২০১৫ সালের দিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শাহ আলমের পিতা জানু মিয়া নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এক আসামিকে গুলি করে হত্যা করে শাহ আলম। সে থেকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনায় আসে তার নাম । শাহ আলমের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি বাহিনী গড়ে তোলা হয়। সুজানগর-সংরাইশ, পাথরিয়া পাড়া, নবগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদারি কাজের ভাগবাটোয়ারা, মাদক ব্যবসা, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, বাড়িঘর নির্মাণে জোরপূর্বক মালামাল সরবরাহসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিল শাহ আলম ও তার বাহিনী। কাউন্সিলর হত্যা মামলার আসামি তার ভাই আলমের বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক কারবারসহ নানা অভিযোগ। অস্ত্র চালনায় পারদর্শী ও বোমা তৈরির কারিগর ছিল শাহ আলম ॥ পুলিশ জানায়, শাহ আলম বিভিন্ন মামলায় অন্তত চার বার কারাগারে যায়। সেখানে সে অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। জেল থেকে বের হয়ে এক সময় সে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠে ও বোমা তৈরির কারিগরে পরিণত হয়। কাউন্সিলরসহ দুই হত্যাকা-ের দিন শাহ আলম দুই হাতে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালায়। এছাড়া সে বোমা তৈরির কারিগর। পুলিশের দাবি ঘটনার পর সংরাইশ বড় পুকুর পাড় এলাকা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যে ৪৮টি হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো শাহ আলম নিজেই তৈরি করেছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বোমাগুলো শাহ আলমের তৈরি করা। অস্ত্র ভা-ার ॥ সন্ত্রাসী শাহ আলম কাউন্সিলর হত্যা মিশন শেষ করে তার জেলখানায় থাকাকালীন বন্ধু নাঙ্গলকোট উপজেলার গন্ধাছি গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ জুয়েলের নিকট একটি ৭.৬৫ বিদেশী পিস্তল, একটি বিদেশী রিভলবার, দুইটি পিস্তলের ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড পিস্তলের গুলি জমা রাখে। পুলিশ জুয়েলের বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই সব অস্ত্র উদ্ধার করে এবং জুয়েলকে গ্রেফতার করে। এছাড়া জোড়া খুনের ঘটনার পর গত ২৩ নবেম্বর রাতে নগরীর সংরাইশ বড়পুকুর পাড় এলাকা থেকে দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ৪৮টি অবিস্ফোরিত হাতবোমা, তিনটি কালো ব্যাগ, দুটি কালো জামা ও ১২ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার করে হয়। এসব অস্ত্র ও কাউন্সিলর সোহেলকে হত্যায় শাহ আলমও তার বাহিনী ব্যবহার করেছে বলে পুলিশের ধারণা। জেলা ডিবি পুলিশের এসআই এল আই সি টিমের প্রধান পরিমল চন্দ্র দাস জানান, এছাড়াও শাহ আলম ও তার বাহিনীর অস্ত্র ভা-ারে আরও ১০-১২টি আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, তার বাহিনীর অন্তত ৬ জন বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছে। কাউন্সিলর হত্যা ঘটনার পর দুইজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং অন্যরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে । মামলা ॥ কোতয়ালি মডেল থানার ওসি আনয়ারুল আজিম জানান, শাহ আলমের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় হত্যা, দস্যুতা, মাদকসহ বিভিন্ন ধারায় অনন্ত ৮টি করে মামলা রয়েছে। তবে পুলিশের ভিন্ন আরেকটি সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ডজন খানেক হতে পারে। তবে অনেক সময় কেউ কেউ তার দ্বারা ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হলেও ভয়ে মামলা করার সাহস পেতোনা। সর্বশেষে তার বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা রুজু করে পুলিশ । এলাকায় স্বস্তি ॥ বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী শাহ আলম নিহত হওয়ার খবরে সুজানগর, সংরাইশ, পাথুরিয়াপাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। বৃহস্পতিবার নগরীর সুজানগর-সংরাইশ এলাকায় জনতা মিষ্টি বিতরণ করে এবং তার লাশ এলাকায় আনতে বাধা সৃষ্টিসহ ঝাড়ু মিছিল করে। লাশ দাফন ॥ স্থানীয় জনগণের বাধার মুখে শাহ আলমের লাশ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। জানাজা ছাড়াই তার লাশ টিক্কারচড় কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানা গেছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কমল চন্দ্র ধর জানান, এর আগে কুমেক হাসপাতাল মর্গ থেকে শাহ আলমের লাশ সরাসরি টিক্কারচর কবরস্থানে নেয় পুলিশ।
×