ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ২১:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রাপ্তি

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিডা) আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। বিডার চেয়ারম্যানের ভাষ্যে জানা যায়, এবার ২৭৫ কোটি ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে এ পর্যন্ত। এই বিনিয়োগের অধিকাংশই সৌদি বিনিয়োগ। সে দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প ও হাসপাতাল নির্মাণে বড় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। এর বাইরে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে তুরস্ক ও চীন থেকে। এর মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রাস্ত কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার বরাতে জানা যায়, সব মিলিয়ে ১১টি খাতে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া যেতে পারে। অর্থমন্ত্রীর মতে, কর কাঠামো, নীতি সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ও আদর্শ স্থানীয়। তবে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যেমন- দক্ষ লোকের অভাব, তীব্র যানজট, কাঁচামাল প্রাপ্তির সমস্যা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৫৪টি দেশের ৬ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয় বিনিয়োগ সম্মেলনে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগো, ল-ন, ফ্রান্সসহ যেসব দেশে সফরে গিয়েছেন, যেমন- জার্মানি, জাপান, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র- সেসব দেশেও তিনি দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ী, শিল্পগোষ্ঠী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত ও আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুতির পথে। ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। দেশী-বিদেশী নিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ, স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ, বিদ্যুত-পানি, গ্যাস যোগাযোগ অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই দেশে প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন মেনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ বন্ড ও প্রিমিয়াম বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারবেন প্রবাসীরা। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে বাংলাদেশ আয়োজিত রোড শোতে বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত প্রায়। রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে জোরেশোরে। ২০২২ সালের জুন নাগাদ চালু হতে পারে পদ্মা সেতু। তাতে দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চালে বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও জনপদের সঙ্গে স্থাপিত হবে সরাসরি সংযোগ। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয়সহ গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। রাজধানীতে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দৃশ্যমান হয়েছে ইতোমধ্যে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউবের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এটিও সচল হতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার থেকে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত স্থাপিত হবে সড়ক ও রেল যোগাযোগ। একদিকে ভারত-নেপাল-ভুটান, অন্যদিকে মিয়ানমার-চীন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা বদলে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশ হবে এর কেন্দ্রবিন্দু। চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে চলমান গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রাবন্দর, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, রামপাল ও বাঁশখালীতে দুটি বৃহৎ কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হতে পারে বিনিয়োগের জন্য সর্বোত্তম স্থান।
×