ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবারের মতো বেড়ানোর সুযোগ পেল ভাসানচরের রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২ ডিসেম্বর ২০২১

প্রথমবারের মতো বেড়ানোর সুযোগ পেল ভাসানচরের রোহিঙ্গারা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো স্বজনদের বাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেলেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার থেকে এক বছর আগে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) প্রতিনিধি এবং ভাসানচরের ক্যাম্প ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাসানচর থেকে ৬৫ জনের একটি দল স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে গেছে। ক্যাম্প ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আমাদের কাছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা আবেদন করেছিলেন। আবেদনের ভিত্তিতে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ভাসানচরে বসবাসকারী ৬৫ জন রোহিঙ্গার একটি দল কক্সবাজারে রেখে আসা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। যদি এই দলটি ঠিকভাবে ফিরে আসে তাহলে এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তারা সেখানে আট দিন থাকবেন। এরপর ভাসানচরে ফিরবেন। মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচর থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুটি বাসে করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু হয়। এ পর্যন্ত সেখানে গেছেন প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা। ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা শুরু থেকেই কক্সবাজারে যাতায়াতের দাবি জানালেও সরকার এতদিন রাজি হয়নি। তবে গত ৯ অক্টোবর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবির দেখভালের দায়িত্বে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর আগের অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অনেক স্বজন এখনও কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য ভাসানচরে বসবাসকারীরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। সব দিক বিবেচনা করে তাদের কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পর রোহিঙ্গারা আবারও ভাসানচরে ফিরবেন। কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় এক বছরের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সক্ষম হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। গত অক্টোবর মাসে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় যুক্ত হয় জাতিসংঘ। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইইউএনএইচসিআর)। চুক্তির পর নবেম্বরের শুরুতে দ্বীপটি দেখে আসে ইইউএনএইচসিআর এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ প্রতিনিধি দল। ১৭ নবেম্বর জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার ১৩৭ দশমিক ২৮ টন মালামাল নিয়ে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ভাসানচরে যায়। এদিকে, কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আবেগাপ্লুত করেছে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের। ভাসানচরে বসবাসকারী রশিদা বেগম বলেন, এখানে এসে ভেবেছিলাম আর কোনওদিন কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের দেখতে পাবো না। কিন্তু দীর্ঘদিন পর ভাসানচর থেকে কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসকারী আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এখান থেকে একটি দল গেছে। এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। আমিও কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি এই দলটি ফিরলে আমরাও যাওয়ার সুযোগ পাবো। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেখে অনেকে ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেছেন উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. রফিক। তিনি বলেন, অনেক রোহিঙ্গা যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় ভাসানচরে যেতে চান না। এই সুযোগটা দেখে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী হবেন রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। তাদের বেশির ভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
×