ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়া কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষ আজ

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২ ডিসেম্বর ২০২১

পটুয়া কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষ আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে তিনি এঁকেছিলেন পাকি জেনারেল ইয়াহিয়ার বিকৃত মুখচ্ছবি। সেই মুখাবয়বে ফুটে উঠেছিল জানোয়ারের প্রতিচ্ছবি। পরবর্তীতে সেই ছবিটি প্রকাশিত হয় পোস্টাররূপে। পাক বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সেই পোস্টারে লেখা ছিলÑ এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে। ছবিটি এঁকেছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। দেশের পথিকৃৎ এই চিত্রকর নিজেকে পটুয়া হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন । আজ বৃহস্পতিবার স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ এই পথিকৃৎ শিল্পীর জন্মশতবর্ষ। ১৯২১ সালের দোসরা ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পটুয়া কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিবভাগ এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন। পটুয়া কামরুল হাসানের মূল্যায়নে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, তিনি দেশের আধুনিক চারুশিল্পের পথিকৃৎ। শিল্পীর পরিচয়ের বাইরে তিনি ছিলেন এক সংগ্রামী মানুষ। সেই সুবাদে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে। ছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাই এই শিল্পীর জন্মশতবর্ষ চারু শিল্পাঙ্গন তথা বাংলাদেশের জন্য অনন্য এক মাইলফলক। কামরুল হাসানকে নিবেদিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে আজ বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে চারুকলা অনুষদসংলগ্ন শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হবে কর্মসূচী। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। অতিথি থাকবেন শিল্পকন্যা সুমনা হাসান ও শিল্পী রুমানা রশীদ দৌলা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস। দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকিচত্রী নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের চারুশিল্পের ইতিহাসে পটুয়া কামরুল হাসান এক অবিস্মরণীয় নাম। দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব । ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতার শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন এই শিল্পী। তিনি ছিলেন জনমানুষের শিল্পী। বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধে শিল্পীর আঁকা ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তেমনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেতে ভূমিকা রেখেছে। এই শিল্পী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকারের তথ্য কেন্দ্রের প্রধান শিল্পী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নক্সা করেন তিনি। দেশের জাতীয় প্রতীকসহ বাংলাদেশ ব্যাংক, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, পর্যটন কর্পোরেশন এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মনোগ্রাম অঙ্কন করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ছিলেন শিশু সংগঠন মুকুল ফৌজ ও বিসিক নক্সা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ কার্টুন চিত্র এঁকে সেসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিলেন । ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় কবিতা পরিষদের উৎসবে সভাপতিত্ব করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
×