ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ জিল্লুর রহমান

ভাঙ্গন চায় না কেউ

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২ ডিসেম্বর ২০২১

ভাঙ্গন চায় না কেউ

বিবাহ বিচ্ছেদ কখনই কোন আনন্দের বা সুখকর খবর নয়, হোক সে বিচ্ছেদ তরুণ, মধ্য বয়স কিংবা বেশি বয়সে। কম বয়সীদের বিচ্ছেদ কিছুটা সহজে মেনে নিলেও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অত সহজ নয়। এক একটি বিবাহ বিচ্ছেদ দীর্ঘদিনের একটি সাজানো গোছানো সংসার বা লালিত স্বপ্নের অবসান। যাদের সন্তান আছে তাদের জন্য এটা বিরাট বেদনার, দাম্পত্য জীবনের জন্য বিরাট লাঞ্ছনার এবং মানসিক জীবনের জন্য বিরাট যন্ত্রণার বিষয়। কিছুদিন আগে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের বিচ্ছেদ সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। তারকাদের বিবাহ বিচ্ছেদ প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে স্থান পায় এবং নানাজনে নানাভাবে তির্যক মন্তব্য করে থাকে। আসলে পাশ্চাত্যে বিবাহ বিচ্ছেদ নতুন কোন বিষয় নয়। এটা হরহামেশাই ঘটছে। বিবাহ তাদের কাছে স্থায়ী কোন লিখিত দলিল বা চুক্তি নয়, বরং লিভ টুগেদার, বিবাহ বহির্ভূত প্রেম, পরকীয়া এসব সেসব সমাজে রাজত্ব করছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, বেলজিয়ামে ৭১ শতাংশ বিয়েই শেষ পর্যন্ত তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদে গড়ায়। এদিক থেকে বেলজিয়াম গোটা বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। আরেক ইউরোপীয় দেশ পর্তুগাল এক্ষেত্রে দ্বিতীয় এবং সেখানে তালাকের হার ৬৮ শতাংশ। এরপরে যথাক্রমে রয়েছে হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্পেন, লুক্সেমবুর্গ, স্তোনিয়া, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেনেও প্রায় অর্ধেক বিয়ে তালাকে গড়ায়। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ দম্পতিদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে, যা দেশের অনেক মানুষই ভালভাবে জানে না। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাককে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে মিলমিশ রাখার সব প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়ে যায়; তখন এ ব্যবস্থার সাহায্যে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের স্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিগত সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখার এবং জীবনকে অশুভ ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করাই হচ্ছে তালাকের উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে তালাক নামে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা রয়েছে যেখানে তালাক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আসলে নানা কারণে ডিভোর্সের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যেন মনে হয় সেই সুখের নীড়ে আগুন ধরে গেছে। বাস্তবিক পক্ষে বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য নয় বরং এটা একটা সামাজিক সংস্কার এবং দু’জনের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়ার বিষয়। পাশাপাশি, ব্যক্তি জীবনে আপন জীবন সাথীর সঙ্গে সুখের নীড় রচনার প্রয়াসও বটে। আধুনিককালে এই সুখের বাসা রচনার চেষ্টায় হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বেই নানা কারণে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। তবে সাধারণত যেসব কারণে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে কয়েকটি হলো- আর্থ-সামাজিক সমস্যা, মানসিক রোগ, ক্রোধ, হতাশা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, আকাশচুম্বী প্রত্যাশা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অদূরদর্শী ভূমিকা। আসলে বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান শিকার হন সন্তানেরা। তারা বেড়ে ওঠে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান হিসেবে। যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। তারা এক ধরনের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ বা পরিচিতি সঙ্কটে ভোগে। মনোচিকিৎসকরা মনে করেন, সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। তারা সমাজকে, পরিবারকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে। তাদের মধ্যে জীবন বিমুখতা তৈরি হয় যা ভয়াবহ। হতাশা ও বিষণœতায় তারা বেড়ে ওঠে যারা একটি রাষ্ট্র ও সমাজের জন্যও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আইন বা ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক যদিও একটি বৈধ অধিকার কিন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি একটি চরম অপছন্দনীয় কাজ। কারণ এর নিষ্ঠুর পরিণতি ভোগ করতে হয় সন্তানকে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে। গেণ্ডারিয়া, ঢাকা থেকে
×