ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিকতার পরিবর্তন

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২ ডিসেম্বর ২০২১

মানসিকতার পরিবর্তন

ইদানীং বিয়েবিচ্ছেদ অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এখন সমাজের ওপরতলা থেকে হতদরিদ্র পরিবার পর্যন্ত কেউ এর অভিশাপ থেকে মুক্ত নয়। তবে রকমটা ভিন্ন। বর্তমানে নানা কারণে বিচ্ছেদের মাত্রা বহুগুণ বেড়েছে। আগের দিনে নারীদের শিক্ষার প্রবণতা ছিল খুবই কম, নারীরা অত স্বাধীনচেতা ছিল না। যে কারণে স্ত্রী হয়ে স্বামীর ঘর আঁকড়ে ধরাই ছিল তাদের একমাত্র উপাস্য। অনেক ক্ষেত্রে একান্নবতী পরিবারের বিভিন্ন চাপ সামলিয়েও সুযোগ্যা স্ত্রী, ভাবি, জননী, জায়া হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে চিরচেনা বাঙালী নারীরা বদ্ধপরিকর ছিলেন। কোন কোন সময় শ্বশুরবাড়ির শত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেও সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। তাই তো বলে, বাঙালী রমণীদের ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’। এখন দিন পাল্টে গেছে, নারীদের শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অনেকটা স্বনির্ভর হয়ে ওঠেছেন। শিক্ষা জীবনে মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অবস্থান এখন সুদৃঢ়। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের চেয়েও নারী সহকর্মীরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। ফলে অনেক শিক্ষিত নারীর মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাব জাগ্রত হওয়ার পাশাপাশি হার না মানা বা বশ্যতা শিকার করে না চলার মানসিকতা কাজ করছে। ফলশ্রুতিতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো প্রকট হয়ে উঠছে। এক সময় তিক্ততার পাল্লা ভারি হতে হতে স্ফুলিঙ্গে রূপ নেয়। এতে উভয়পক্ষ বিয়েবিচ্ছেদ ঘটিয়ে এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের পথ খোঁজে। তবে এটা ভাবাও ভুল হবে যে, শিক্ষিত রমণীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। না, তা কিন্তু নয়, বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা এখন সচ্ছল-অসচ্ছল, দরিদ্র-হত দরিদ্র, ধনী, মধ্যবিত্ত, ভাসমান, শিক্ষিত-অশিক্ষিত ইত্যাদি সব পেশা-শ্রেণীর নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যাপকতর হচ্ছে। তবে বিয়েবিচ্ছেদের উপরোক্ত ভাষ্যগুলো একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। আরও বহুবিধ কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সুখের দাম্পত্য জীবনে তৃতীয় জনের অনুপ্রবেশ যাকে আমরা পরকীয়া বলে থাকি-এর আসক্তিজনিত কারণেও বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে এসবকে কেন্দ্র করে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতেও প্রায়শই দেখা যায়। তাছাড়া বাল্যবিয়ে, যৌতুক, গোপন বিয়ে, প্রতারণামূলক বিয়ে, ভ্রাম্যমাণ বিয়ে, অসম বিয়ে, অভাব-অনটন, বিদেশ গমন প্রভৃতি নানা কারণেও বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। পুরুষের পাশাপাশি কিছু কিছু নারীও এখন প্রতারণা বিয়ের আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ নেশার অন্ধগলিতে পা দিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে জীবনের অনুষঙ্গ করে তুলছে। বিয়েবিচ্ছেদের খড়গটা প্রায় ক্ষেত্রে নারীদের ঘাড়ে পড়ে। অনেক নারী উভয়কূল হারিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনের ঘানি টানছে। অপেক্ষাকৃত অসচ্ছলদের ছেলে-মেয়েরা শিশুশ্রম এবং কেউ বা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যাপক সামাজিক এবং মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া এহেন অভিশপ্ত জীবনের পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া আদৌ কি সম্ভব? রাউজান, চট্টগ্রাম থেকে
×