ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০২১

বিকল্প নেই

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় রেখেই একদিনে ঘটে গেছে দুটি ঘটনা। রামপুরায় বাসচাপায় নিহত হয় মাইনুদ্দিন নামে এক স্কুলছাত্র। একই এলাকায় বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় এক শিক্ষার্থীকে। সোমবার রাতে রামপুরা টিভি রোডের সামনের রাস্তা পারাপারের সময় অনাবিল পরিবহনের দ্রুতগামী একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি বাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বাসের চালকসহ দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। একই দিন দুপুরে মুগদা থেকে করোনার টিকা নিয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে বাসায় ফিরছিলেন ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের এক ছাত্রী। ভাড়া নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে বাসের হেল্পার এই ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেয়। বিষয়টি প্রচার হলে রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় শিক্ষার্থীরা আটকে রাখে রাইদা পরিবহনের ৪০টি বাস। পরে পুলিশের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বাসগুলো ছেড়ে দেয়া হয়। ২০১৮ সালে দুই বাসের রেষারেষির সময় রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল। পুরো রাজধানী স্থবির করে দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি তুলেছিল। সেদিন অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল নিরাপদ সড়ক গড়ার। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। লেখাপড়া ছেড়ে শিক্ষার্থীদর রাস্তায় আন্দোলন যেমন সমীচীন নয়, তেমনি কি কারণে তাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে তাও ভেবে দেখতে হবে। বিবেচনায় নিতে হবে তাদের আন্দোলনের বিষয়বস্তু। ১৮ সালে দুই বাসের রেষারেষিতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিল। রাস্তা পার হতে গিয়ে বাসের এই রেষারেষিতেই যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নিহত হয়েছিল নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। একই কারণে বাংলা মোটর এলাকায় নিহত হয়েছিলেন জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক ইউসুফ পাশা। বাস চালকের অসাবধানতায় দ্রুত বাস থেকে নামতে গিয়ে কাওরানবাজার এলাকায় নিহত হয়েছিলেন আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জগলুল আহমেদ। এমন অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা দেয়া যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে বহুদিন ধরে। দেশের প্রত্যেক নাগরিক চান তিনি নিজে কিংবা তার সন্তান নিরাপদে ঘরে ফিরুক। আন্দোলন হয় এ কারণেই। বাস চালকদের এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করার কোন ফর্মুলা আবিষ্কার হয় না। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি সবাই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি! রাজধানীর বাসগুলোর এই অশুভ প্রতিযোগিতা থেকে যাত্রীদের মুক্তি দেয়া এবং পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরানোর লক্ষ্যে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক। অসংখ্য পরিবহন কোম্পানির পরবর্তে তিনি এক রুটে একটি কোম্পানির চিন্তা করেন। এ নিয়ে একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকমাস আগে দুই সিটির নতুন মেয়র বৈঠক করে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, পহেলা ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এক রুটে একটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস চলাচল শুরু হবে। প্রস্তুতির অভাবে নির্ধারিত সময়ে এই বাস সার্ভিস চালু করা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। রাস্তায় বাস চালিয়ে ব্যবসা করতে পারেন যে কোন নাগরিক। নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে যখন খুশি, যেভাবে ইচ্ছে তিনি এই বাস চালাতে পারবেন না। তাকে আসতে হবে একটি কোম্পানির আওতায়। কোম্পানিতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাস নেয়া হবে। একটি কোম্পানি শুধু একটি রুটে বাস চালানোর সুযোগ পাবে। দিনশেষে হিসাব করে মালিকরা বাসপ্রতি তাদের লভ্যাংশ বুঝে নেবেন। রাজধানীর রাস্তায় অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে নিরাপদ সড়ক গড়তে হলে এর কোন বিকল্প নেই। সিদ্ধান্ত যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
×