ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওমিক্রন

অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হওয়ার মতো ভাইরাস নয়

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১ ডিসেম্বর ২০২১

অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হওয়ার মতো ভাইরাস নয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনার সদ্য আবিষ্কৃত ধরন ওমিক্রন নিয়ে অতিমাত্রায় আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম সতর্ককারী চিকিৎসক। এ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি নামের এই নারী চিকিৎসক বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সোমবার ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভি তার একটি বিশেষ সাক্ষাতকার প্রচার করে। সাক্ষাতকারে এ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন, করোনার ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ও ওমিক্রনে আক্রান্তদের উপসর্গ এক নয়। তার মতে ওমিক্রনে আক্রান্তদের ক্লান্তি, মাথা ও শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে গলাব্যথা ও কাশি হতে পারে। এই ধরনের সঙ্গে ডেল্টার তুলনা করে তিনি বলেন, ডেল্টার ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। ডেল্টা আক্রান্তদের স্বাদ ও গন্ধ নেয়ার ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। তবে ওমিক্রনে আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে এ সব লক্ষণ দেখা যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার পিট্রোরিয়া শহর বর্তমানে ওমিক্রনে আক্রান্তদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শহরটির কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক ওমিক্রন আক্রান্তের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন এ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি। ১৮ নবেম্বর একটি নতুন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন এই চিকিৎসক। এর এক সপ্তাহ পর ওমিক্রন ভাইরাসের বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে আসে। তিনি আরও বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্তের সর্দির কারণে নাক দেবে গেছে, এমন কথা কেউ বলেননি। এ ছাড়া করোনার এ ধরনে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়নি। তার মতে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসকের কাছে না গেলেও চলে। ঘরে বসে নিজে নিজে চিকিৎসা নিলেই এ সব উপসর্গ থেকে সেরে ওঠা যায়। এ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে চাই যে, করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণক্ষমতা ডেলটা ধরনের মতো ভয়াবহ নয়। তবে এটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। তার মতে, ‘এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাউকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ঠিক কতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, এ বিষয়ে আমরা শীঘ্রই একটা ধারণা পাব। তার মতে, ওমিক্রন আফ্রিকার কোন রোগ নয়। বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। তাই সীমান্ত বন্ধের আগে আমাদের অপেক্ষা করা প্রয়োজন। তিনি জানান, ওমিক্রন ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণদের মধ্যে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। অবশ্য তারা গুরুতর অসুস্থ নন। তবে অবস্থা যে কোন সময় বদলাতে পারে। সাক্ষাতকারে তিনি দ্রুত সবাইকে টিকার আওতায় আনা এবং কোভিডের বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করার ওপর জোর দেন। কোয়েৎজি বলেন, টিকা হয়তো এ ধরন থেকে সুরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা দেবে না, তারপরও টিকা নিতে হবে। মাস্ক পরতে হবে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ওমিক্রন’ নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ নেই। তবে জি-৭ ভুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় খুব দ্রত ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে সীমান্তে কড়াকাড়ি ও নানা বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। তবে বাইডেন আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি ওমিক্রনের জন্য নতুন করে লকডাউন কিংবা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করছেন না। ওমিক্রনের কারণে এখনও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এটি ঠিক কতটা সংক্রামক এবং বিদ্যমান টিকা এতে কতটা কার্যকর তা এখনও স্পষ্ট নয়। জরুরী বৈঠক শেষে জি-৭ ভুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, বিশ্ব সম্প্রদায় নতুন ও উচ্চ সংক্রামক করোনার ধরনের হুমকির মধ্যে। তাই জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বাইডেন বলেন, ওমিক্রনের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ভাল অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, ওমিক্রন প্রতিরোধে আমাদের পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি হাতিয়ার রয়েছে। বাইডেন জানান, তার প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা এ্যান্থনি ফাউচি আশা করছেন, বর্তমান টিকা দিয়েই ওমিক্রন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফাইজার এবং রাশিয়ার টিকা স্ফুটনিক ভি প্রস্তুতকারীরা বলেছে, তারা ওমিক্রন নিয়ে কাজ করছেন। মার্কিন কোম্পানি মডার্না বলেছে, তারাও ওমিক্রন প্রতিরোধে টিকার উন্নয়ন ঘটাবে।
×