ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০২১

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মুনতাসির জিহাদ ॥ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজ। করোনা মহামারী সংক্রান্ত জটিলতা পেরিয়ে আজ বুধবার থেকে পাঁচদিনব্যাপী নানা ধরনের আয়োজনে উদ্যাপিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। এ উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে হরেক রকমের বর্ণিল আলোয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করেছিল দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। চলতি বছরের ১ জুলাই শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপনের লক্ষ্য থাকলেও করোনা মহামারীতে তা পিছিয়ে যায়। ঢাবির শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কলা ভবন, কার্জন হল, স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, বটতলাসহ প্রধান সড়কগুলো লাল, নীল, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের বাতির আলোয় সাজানো হয়েছে। ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা সংবলিত চারকোনা লাইটবক্স, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ঝুলোনো হয়েছে ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। তবে কোভিড বিধিমালা মেনে চলা ও ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে আরও তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে, বটতলার পাশে এবং টিএসসির পায়রা চত্বরে তৈরি করা প্যান্ডেলে বড় স্ক্রিন বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেখানে বসেই মূল অনুষ্ঠান দেখতে পারবে। আজ বুধবার সকালে শতবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এছাড়া, তিনি প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ, ফটোগ্রাফি এ্যালবাম ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাবি এ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাবি এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতবর্ষের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও শতবর্ষের থিম সং পরিবেশন করা হবে। এদিন বিকেলে একক আবৃত্তি পরিবেশনা করবেন ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সংগীত পরিবেশনা করবে সংগীত বিভাগ, নৃত্য পরিবেশনা করবে নৃত্যকলা বিভাগ ও বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন ভারতীয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। শিল্পী হিসেবে এদিন আরও অংশগ্রহণ করবেন সামিনা চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফরিদা পারভীন, ফাতেমা তুজ জোহরা। উদ্যাপনের ২য় দিন অর্থ্যাৎ ২ ডিসেম্বর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে সন্ধ্যায় একক আবৃত্তি করবেন সুবর্ণা মোস্তফা, নৃত্য পরিবেশন করবেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, সংগীত পরিবেশন করবে ঢাবির সংগীত বিভাগ। শিল্পী হিসেবে আরও থাকবেন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, ইয়াসমীন মোস্তারী, ফাহমিদা নবী, কুমার বিশ্বজিৎ। অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। সন্ধ্যায় নাটক পরিবেশন করবে ঢাবির থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, নৃত্য পরিবেশন করবে ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগ। শিল্পী হিসেবে এদিন অংশগ্রহণ করবেন সুজিত মোস্তফা, রফিকুল আলম, শুভ্র দেব এবং বাপ্পা মজুমদার। উৎসবের ৪র্থ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মশিউর রহমান এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার অংশগ্রহণ করবেন। সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করবে ঢাবির সঙ্গীত বিভাগ এবং ঢাবি অফিসার্স ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। নৃত্যনাট্য চ-ালিকা পরিবেশনা করবে ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগ। শিল্পী হিসেবে এদিন অংশগ্রহণ করবেন নাদিরা বেগম, কিরণ রায়, শারমিন সুলতানা সুমি। থাকবে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুট। আগামী ১২ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এক বিজয় র্যা লি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। ঐদিন বিকেলের আলোচনা পর্বে ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া, দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলগুলো সঙ্গীত পরিবেশনা করবে। সবশেষ ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আতশবাজি ও লেজার শোয়ের মাধ্যমে বর্ণিল উদ্যাপন অনুষ্ঠানের পর্দা নামবে। শতবর্ষের আনন্দে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ঢাবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য অপেক্ষায় আছি। অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্তটির দেখা মিলেছে। ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না তাসনিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারা খুবই আনন্দের। এমন মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে আমি গর্বিত। আমাদের এমন আনন্দঘন পরিবেশ উপহার দেয়ার জন্য ঢাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ। ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসকে বর্ণিল আলোয় সাজানো হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আলোকসজ্জা থাকবে। এছাড়া, প্ল্যাকার্ড টাঙানো ও মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ। শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা শতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উৎসব প্রাণভরে উপভোগ করবেন বলে আশা করছি। উদ্যাপন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×