ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৩০ নভেম্বর ২০২১

ঢাকার দিনরাত

গরিবের গরম কাপড় কেনা শুরু হয়ে গেছে। ফুটপাথই ভরসা। এক বছর কিনলে দিব্যি কয়েক বছর পার করা যায়। অন্যদিকে ধনীলোকের শীত হলো ফ্যাশনের মৌসুম। ব্লেজার, জ্যাকেট, শাল, কার্ডিগান কেনার সময়। এক শীতের জন্যই এসব কেনাকাটা। কথাগুলো বলছি এজন্য যে ক’দিন হলো ঢাকার দিন আর রাতের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান বেড়ে গেছে কিছুটা অস্বাভাবিক হারে। রাতে রীতিমতো শীত লাগছে। সচল সিলিং ফ্যানগুলো ফের বন্ধ। ডিসেম্বর এসে পড়েছে, তবু কম্বল-কাঁথা সব দেরাজ থেকে বের করার ইচ্ছে যেন হচ্ছে না। গত সপ্তাহে রাতে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বনি¤œ পনেরো-ষোলো ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল পরপর ক’দিন। আর দিনের বেলা ঊনত্রিশ ছুঁইছুঁই- দস্তুরমতো প্যাঁচপেঁচে গরম। আর সে কি রোদ! এই যে দিন আর রাতের তাপমাত্রার এমন বেজায় ফারাক চলেছে তাতে বিপদে পড়েছে মূলত শিশু ও অল্পবয়সীরাই। খুদে শরীর এই ওঠানামার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না ঠিকঠাকমতো। ফলে সর্দি ও জ্বরজারি উটকো অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছে রাজধানীর বহু ঘরেই। কবি জীবনানন্দ দাশ শীতের কথা বলতে গিয়ে ‘শীতরাত’ কবিতায় কি ভীষণ সত্যোচ্চারণই না করেছেন : ‘এইসব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে’। এতে দার্শনিকতা আছে। কিন্তু গোটা কবিতা যখন পড়ি তখন এক ব্যাপক গভীর গহীন মৃত্যু আমাদের গ্রাস করতে চায়। শীতের পরেই আছে বসন্ত; মাঘের বাগধারার পরে ফালগুনের ফুলের সৌগন্ধ। জীবনানন্দ যেন এই পুনপুন আবর্তনকে ব্যঙ্গ করে যান এই ভাবে- ‘এদিকে কোকিল ডাকছে- পউষের মধ্যরাতে;/ কোন একদিন বসন্ত আসবে বলে?/কোন একদিন বসন্ত ছিল তারই পিপাসিত প্রচার?’ জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য তবে শূন্যতায়, অমোঘ মৃত্যুতে। শীতরাতই সে ধ্রুব সত্যকে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ। এই কবিতার শেষটা ভীষণ ভয়ার্ত। কবি জানাচ্ছেন, অরণ্যকে আর পাবে না সিংহ, খসে পড়া কোকিলের খসে পড়া গান পাহাড়ে নিস্তব্ধ! উপসংহারে পৃথিবীর উদ্দেশে বলছেন, হে পৃথিবী, হে বিপাশামদির নাগপাশ,-তুমি পাশ ফিরে শোও, কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর। শীতের মৃত্যুচুম্বিত রাতগুলো নিয়ে আর কী সত্য আমাদের জানা বাকি রইল, বলুন? তবে ঢাকাবাসী কেবল নয়, গোটা দেশেই শীতে চলে বহুমুখী উৎসব। কবি যাই বলুন, শীত অনেকের হৃদয়েই উষ্ণতা ছড়ায়। এবারের শীত-শীত নবেম্বরে মিস করলাম ফোক ফেস্টিভ্যাল ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। ভুলতে পারি না বিদুষী বোম্বে জয়শ্রীর কথা। তার মতো সঙ্গীতজ্ঞদের গান শোনার সুযোগ করে দিয়েছিল ঢাকার উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। কর্নাটিক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এই গুণী শিল্পী লাইফ অব পাই চলচ্চিত্রের ‘পাইস লালাবাই’ গানটির জন্য ২০১৩ সালে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। চেন্নাইয়ে অবহেলিত দরিদ্র এবং অটিস্টিক শিশুদের সপ্তাহে এক দিন করে সঙ্গীত শেখান। জয়শ্রী বলে থাকেন, ‘সমুদ্রসমান কাজে এগুলো বিন্দুও নয়। আরও অনেক কাজ করার আছে।’ এমনি এমনি তো আর বড় মাপের শিল্পী হওয়া যায় না! গত বছরও ছিল না উৎসব দুটি। বলাবাহুল্য করোনার কারণেই। এবারও নিশ্চয়ই তাই। যদিও গুলশান-বনানী-ধানম-ির কফিশপ আর রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে খালি টেবিল সহজে মেলে না। গান নেই বটে, কিন্তু কথামালা চলছেই। বাঙালী কথা বলতে ভালবাসে। বাস মালিকরা অনড় ভোগান্তি সবার ছাত্রদের গণপরিবহনে হাফ-ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন দশদিন পেরিয়ে গেল। হঠাৎ হঠাৎ কোন কোন সড়কে তাদের আন্দোলনের জন্য সব গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অফিসগামীসহ অন্যান্য যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে। বাস মালিকরা দু’দফা আলোচনায় বসেছেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা কিছুতেই হাফ ভাড়া দিতে রাজি নন। এতে তাদের আয় কিছুটা কমবে, সেটি তারা ভাবতেই পারছেন না। ডিজেলের ১৫ টাকা বাড়ার অজুহাতে যে এক লাফে অনেকটা ভাড়া তারা বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন, মানে তাদের মুনাফা বেড়েছে, এটিও তারা স্বীকার করতে নারাজ। বাস মালিকরা চুক্তিতে বাস ছেড়ে দেন চালক-পরিবহন শ্রমিকদের হাতে। যাত্রীদের কাছ থেকে কতটা আদায় হচ্ছে সেটিও তারা আমলে আনতে চান না। ফলে এই খাতে পরিবহন শ্রমিকরাও বিপাকে পড়ে গেছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নটর ডেম ছাত্র নাঈমের মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদও চলছে। আমাদের লেখকবন্ধু মফিজুল হকের বক্তব্য যুক্তিপূর্ণ মনে হলো। তিনি বললেন, ‘বাস মালিক সমতির বক্তব্য ৮০ শতাংশ বাস মালিক গরিব মানুষ। হতেই পারে ৮০ বা ১০০ শতাংশ বাস মালিকই গরিব। কিন্তু এটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। দুদক বা বিআরটিএর দায়িত্ব হওয়া উচিত এদের সম্পদের হিসাব নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা আর জনগণের কাছে তাদের মালিকানাধীন সম্পদের তালিকা প্রকাশ করা। আর হাফ ভাড়ার প্রশ্নে আমার অভিমত হলো- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘোষিত সময়কালে যে যে বাস যে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াতের পথে পড়ে সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০% ভাড়ায় যাতায়াত অনুমোদন করা। তবে যেসব শিক্ষার্থী বাসে মোবাইল ফোন বহন করবেন তাদের অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা না দেয়া। আমরা জানি অনেক শিক্ষার্থীর পকেটেই এত দামী মোবাইল ফোন থাকে যা অনেক বাস মালিকেরও নেই।’ হাফ ভাড়া প্রসঙ্গে বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর ফেসবুক পোস্ট থেকে তার ছাত্রজীবনে বাসে হাফভাড়া দেয়ার বিষয়টি চমৎকারভাবে এসেছে। পড়ে মজাই লাগল। তিনি লিখেছেন, ‘নব্বই-একানব্বই সালের দিকের কথা। তখন আমরা নটর ডেম কলেজে পড়ি। প্রতিদিন সকাল বেলা রিক্সায় করে মিরপুর দুই নম্বর বা দশ নম্বর নেমে, অথবা কখনও কখনও আরেকটা বাসে চড়ে মিরপুর ১১ নম্বরে গিয়ে বিআরটিসি ডবল-ডেকার ধরতাম। দোতলা বাসে খুব জাঁকজমক করে আমরা যেতাম। নামতাম গুলিস্তানে। সেখানে আবার মুড়ির-টিন ৬এ বাসে করে বনানী-মতিঝিল চড়ে নাচতে নাচতে মতিঝিল কিংবা আরামবাগে নেমে কলেজে ঢুকে পড়তাম। দোতলা বাসে যখন উঠতাম, এক দঙ্গল বন্ধুবান্ধব সব গিয়ে দোতলায় গিয়ে হল্লা মাচাতাম। প্রায় উনিশ-কুড়ি জন, সব নটর ডেম।, উঠেই আমরা ভাড়া কালেক্ট করতাম। সবাই মিলে মাথা গুনে জনপ্রতি ভাড়া একসঙ্গে দিতাম। মূল ভাড়া চার টাকা, আমরা দিতাম দুই টাকা। প্রায় প্রতিদিনই মামু গজর গজর করত, আমরা এত্তগুলা পুলাপান ছিলাম বলে বেশি আওয়াজ করত না। দুয়েকদিন ঝামেলা বেশি করলে যাত্রীরাই হৈচৈ কইরা উঠত, কি ছাত্রদের হাফ দিবা না এত্ত বড় কথা! তবে, ফেরার পথে যেহেতু দল থাকত না, তখন চুপ করে দুই টাকা আর মামুর মেজাজ বুঝে চার টাকা দিয়ে দিতাম। একদিন হৈচৈ চলছে। বাস তখন মৎস্যভবনের সামনে। হাফ-ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টর মামু গজর গজর করছে। এক প্রৌঢ় যাত্রী বলে উঠলেন, ‘ছাত্রদের বাস-ভাড়া সারা দুনিয়ায় হাফ। ছাত্ররা হাফ-ভাড়া দেবে এইটা জতিসংঘের নিয়ম’। এই কথা শুনার পর যাত্রীরা একযোগে সুর মেলাল। এই বিরাট রেফারেন্স শুনে মামু কেটে পড়লেন বাসের নিচতলায়। মুড়ির টিন ৬-এ বাসটি সর্বদা হাফ নিত, নো গোলমাল। জাতিসংঘের কী নিয়ম আমরা কেউই জানি না। কিন্তু ছাত্ররা হাফ-ভাড়া দেবে এটা সার্বজনীন ছিল তখন। রিক্সাঅলার বয়ানে ... জীবনের অপর নাম বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং সেই সঙ্গে অবশ্যই বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে তোলারও সংগ্রাম। তাহলে ঢাকার জীবনের কি আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য আছে? ঢাকার জীবন মানে কি আরও বেশি সংগ্রাম! অর্থ অন্বেষণের জন্যও কি অতিরিক্ত এফোর্ট? অথচ অর্থোপার্জনের জন্যই সময়ের সিংহ ভাগ চলে যায় ঢাকার সিংহ ভাগ মানুষের। ব্যস্ততা, সংগ্রাম আর ভোগান্তি। এই তিন নিয়ে হাবুডুবু খায় ঢাকার জীবন। ঘরের বাইরে জীবনের যে বৈচিত্র্য থাকে তার সবটুকু ঐশ্বর্য নিয়ে তার দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত মেলে না আমাদের অনেক সময়েই। সদর রাস্তার ওপর চোখকান খোলা রেখে অল্প কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে যা দেখা যায়, তাতে পরিপূর্ণ থাকে জীবনেরই বিচিত্র উপাদান। সামান্য কিছুটা সময়ের ভেতর যে অসামান্য ছবিগুলো দেখা যায়, যে সব শব্দ শোনা যায়, মনের ভেতর যে সব প্রশ্ন আর অনুভূতি এসে জড়ো হয়- তার আদ্যোপান্ত নিয়ে শতাধিক পৃষ্ঠার ডকুফিকশন রচিত হতে পারে। চাইলে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মিত হতে পারে। রবিবার সকালে রিক্সায় ওঠামাত্রই রিক্সাঅলা জিজ্ঞেস করলেন আজ কয় তারিখ। উত্তর শুনে বললেন আর দুইদিন পরেই নতুন মাসের এক তারিখ। কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম এক তারিখে কি? রিক্সাঅলা জানালেন, পরিবার নিয়ে বগুড়ায় চলে যাবেন। আর ঢাকামুখো হবেন না। তার এই কথায় একটা ধাক্কা খেলাম। তাই খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চাইলাম। যা জানা গেল তার সারকথা এমন: সামনে ঢাকায় নানা আন্দোলন হবে, গোলমাল হবে। এই ঝুটঝামেলার ভেতর না থাকাই ভাল। আর যারা রিক্সায় চড়ে তাদের পকেটের অবস্থা ভাল না। সব কিছুর বাড়তি দাম। গ্রামের বাড়িতে দশ টাকায় যে বেগুন কিনতে পারেন, ঢাকা শহরে সেই বেগুনই চল্লিশ টাকা। দোতলা মাটির বাড়ি আছে দেশে। বাসা ভাড়া বেঁচে যাবে, সব খরচ কমে যাবে। কয়েক মাস পরে আবার রিক্সা চালাতে শহরে আসবেন। তবে ঢাকায় নয়, সিলেটে। সেখানে লন্ডনের মানুষজন বেশি। তাদের হাতে টাকা আছে। রিক্সাভাড়া বেশি। তাই কামাই বেশি। কোরবানির ঈদে তারা রিক্সাঅলাদের অনেক বেশি কোরবানির মাংস দিয়ে থাকেন, ঢাকার মানুষ কম দেন। রিক্সাঅলার কথায় বুঝতে পারলাম খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে ঢাকা মহানগরীর ভাবমূর্তি কেমন। বিজয়ের মাস আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সংগঠন যারা পরিচালনা করেন ইতোমধ্যে তারা বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সত্যি বলতে কি, প্রতি বছরই নতুন নতুন তরুণ বিজয় দিবস আয়োজনে যুক্ত হচ্ছে। তাদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের সারসত্যটুকু পৌঁছে দেয়া খুব জরুরী। শুধু একখানা কবিতা পাঠ নয়, শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ নয়, তার সঙ্গে যুক্ত করা দরকার আজকের প্রেক্ষাপট এবং স্বাধীনতার শত্রুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার। বিজয়ের তাৎপর্যটুকু নিছক দিবস উদযাপনের আনন্দের মধ্যেই যেন ফুরিয়ে না যায়। এ তাগিদ আমাদের বারবারই দিয়ে যেতে হবে। প্রসঙ্গ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ এখনও অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। সমাজের আরেকটি বাস্তবতা হলো, প্রসঙ্গটির উত্থাপন কিছুটা ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে। মুখে অনেকে বলেন বটে মুক্তিযুদ্ধের কথা, কিন্তু অন্তরে তারা লালন করেন মুক্তিযুদ্ধের ঠিক বিপরীত ধারণাটিই। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে কারও পক্ষেই তা নিয়ে সুবিধাবাদিতা ও স্বার্থপরতার পথে হাঁটা সম্ভব নয়; দেশের উন্নয়নের কথা বলে দেশকে রসাতলে পৌঁছে দিয়ে সঙ্কীর্ণ আত্মোন্নয়ন অসম্ভব। এটা অনস্বীকার্য যে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য একাত্তরের আবেগ জরুরী। ওই একটি বছরেই বাঙালীর দেশপ্রেম চূড়ান্তস্পর্শী হয়েছিল। খাঁটি দেশপ্রেম ছাড়া দেশের ও দেশের মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভূমিকা রাখা অসম্ভব। সেজন্যই মুক্তিযুদ্ধকালীন মানসিকতার নবায়ন প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধকালে যারা ছিল কৈশোরের কোঠায়, আজ তারাই প্রৌঢ়ত্বের দরজায়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আলো যারা পৌঁছে দেবেন তাদের সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আলোচনার কোন বিকল্প নেই। জন্মদিনে শিল্পী রফিকুন নবী শিল্পী রফিকুন নবী কেবল শিল্পী বা শিল্পকলার শিক্ষক নন, তিনি হলেন সমাজসজ্ঞান এক সংবেদনশীল বড় মনের মানুষ। জলরঙ ও তেলরঙে করা তার অসামান্য কিছু শিল্পকর্ম আন্তর্জাতিক মানের। সরস লেখক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। ছোটগল্পের সচিত্রকরণ এবং গ্রন্থের প্রচ্ছদ রচনায়ও রেখেছেন স্বকীয় ঘরানার স্বাক্ষর। তার সৃষ্ট কার্টুন চরিত্র টোকাই এক সময়ে সারা দেশে সাড়া ফেলেছিল। দেশের ডাকে সাড়া দিতে তার কখনই দেরি হয়নি, তা সে ঊনসত্তর-একাত্তরই হোক কিংবা হোক নব্বুই। এই খ্যাতিমান শিল্পীর জন্মদিন চলে গেল দুদিন আগেই। আটাত্তর পেরুলেন তিনি। জন্মদিনে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘ প্রয়োজনের কারণেই আমাকে কার্টুন আঁকতে হয়েছে। নিজেদের অধিকার আদায়ের মিছিলের পোস্টারে কার্টুন এঁকেছি। নিজের তাগিদ থেকেই করেছি। বইয়ের প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশন করেছি- এতে যে প্রচুর টাকা এসেছে, তেমনটা নয়। আমরা সে সময় এই কাজগুলো যারা করতাম, তারা বইয়ের মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই কাজগুলো করেছি। প্রকাশক ও পাঠকের রুচি বাড়ানোর জন্যই আমরা করেছি। রাজনীতির কাজগুলো তো না করলেও পারতাম। রবীন্দ্রনাথের গান যখন রেডিওতে প্রচার নিষিদ্ধ হলো- প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছি। আর এসব নিজে ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার জন্য করিনি, দেশাত্মবোধ থেকে কাজ করেছি। এখন ভাবনাগুলো পেইটিংয়ের মাধ্যমেই প্রকাশ করতে চাই।’ রফিকুন নবীর এবারের জন্মদিনে নবীন-প্রবীণ চিত্রশিল্পীরা তাকে সম্মাননা জানিয়েছেন। শিল্পীকে জন্মদিনের অভিবাদন। সুস্থদেহে শতায়ু হোন এ বরেণ্য শিল্পী- এটিই প্রত্যাশা। ২৮ নবেম্বর ২০২১ [email protected]
×