ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণে কমছে আয়ু

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ৩০ নভেম্বর ২০২১

বায়ুদূষণে কমছে আয়ু

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবাসহ ৯টি সংগঠন শনিবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে রাজধানী ও সারা দেশের বায়ুদূষণ সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর মতে, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বায়ুর শহর। এর অন্যতম কারণ ঘন বসতি, ইটভাঁটি, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ধোঁয়া, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি। যে কারণে রাজধানীবাসী বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় দম বন্ধ করা একটি গ্যাস চেম্বারে। এর ফলে তাদের গড় আয়ু কমছে প্রায় ৭ বছর ৭ মাস। সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট-বুকের পীড়া-হাঁপানি-ব্রঙ্কাইটিস-নিউমোনিয়া রাজধানীবাসীর প্রায় নিত্যসঙ্গী। ভাল নেই ৬৪ জেলার অন্য শহর-বন্দরগুলোও। সেসব স্থানে বায়ুদূষণের হার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী প্রায় ৩ গুণ বেশি। সেখানেও মানুষের গড় আয়ু কমছে গড়ে ৫ বছর ৪ মাস। তদুপরি শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণের হার ঢাকাসহ সব শহরে বেড়ে যায় বহুগুণ। মোটকথা, প্রতিনিয়ত ধুলাদূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যু। সুতরাং ধুলাদূষণ রোধে চাই কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর, দুই সিটি কর্পোরেশনসহ পৌর সংস্থাগুলোকে। সচেতন হতে হবে নাগরিকদেরও। রাজধানীর মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী অগণিত যানবাহনের কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড সংবলিত বিষাক্ত ধোঁয়া, চারপাশ পরিবেষ্টিত ইটভাঁটির ধোঁয়া, মেট্রোরেলের কর্মযজ্ঞ, যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ সর্বোপরি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ টন ধূলিকণা জমে থাকে। সর্বাধিক যা বিপজ্জনক ও আশঙ্কার তা হলো, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে গড় আয়ু কমছে ঢাকাবাসীর। অথচ এ নিয়ে আদৌ কোন হেলদোল নেই মেয়রদ্বয়ের। পরিবেশ অধিদফতর অবশ্য বলেছে, দেশের সার্বিক পরিবেশের মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি এ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ (বেস্ট) নামের একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে শীঘ্রই। এর মাধ্যমে দেশে বায়ু ও পানি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশের সার্বিক মান উন্নত করা সম্ভব হতে পারে। তবে এ কাজের অগ্রগতি তেমন নেই। ততদিন পর্যন্ত ধুলায় ধূসরিত হয়ে থাকবে নাগরিক জীবন। বায়ুদূষণে বিশ্বের ৭৩টি দেশের রাজধানীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ভারতের নয়াদিল্লী। ২০১৮ সালের ভিত্তিতে এই তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়াল। ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্রবস্তু কণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের মতে, বায়ুদূষণের কারণে আগামী বছর বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হবে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা পর্যবেক্ষণে দেখেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান বায়ুদূষণের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও অবশ্য কর্তব্য হবে সেসব দেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বায়ুদূষণের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা। সরকার তথা পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×