ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঝিনাইদহে একাত্তরের স্মৃতিচারণ

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৯ নভেম্বর ২০২১

ঝিনাইদহে একাত্তরের স্মৃতিচারণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ ॥ আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘পথে পথে বিজয়’ শিরোনামে রবিবার সকালে ঝিনাইদহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রোভার স্কাউটস, সাংস্কৃতিক কর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ ৩ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও অবহিতকরণ সভার সভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা পিএএ। এছাড়াও ‘একাত্তরের গল্প শুনি’র ওপর ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের জীবন থেকে স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ফিরোজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মসির উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর হোসেন মালিথা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা লোটন। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ৫০ বছরের ওপর নির্মিত থিমসং ও প্রামাণ্য টিত্র প্রদর্শন করা হয়। শেষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বছর ২০২১ সাল। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি। এই গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ আনন্দক্ষণ পরিবেশে উদযাপনের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন করেছিল, কিন্তু ঝিনাইদহসহ দেশের অনেক অঞ্চলে বিজয় এসেছিল ১৬ ডিসেম্বরের আগেই। হয়েছিল শত্র‍ুমুক্ত। ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার ও এ দেশে তাদের দোসরদের হটিয়ে ঝিনাইদহকে আমরা শত্রুমুক্ত করি। সেদিন ঝিনাইদহের মুক্তিকামী দামাল ছেলেরাও এ থেকে পিছিয়ে ছিল না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশে প্রথম যে সম্মুখ সমর হয় তা সংঘটিত হয়েছিল ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে। উল্লেখযোগ্য, যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে ২ এপ্রিল সদর উপজেলার বিষয়খালী যুদ্ধ, ৪ এপ্রিল শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগস্ট একই উপজেলার আলফাপুর যুদ্ধ, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধ ও ২৬ নবেম্বর কামান্না যুদ্ধ। এছাড়াও ৬ আগস্ট, ১৭ আগস্ট ও ১১ই নবেম্বর জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকহানাদাররা যশোর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৩ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ও ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরসহ অন্যান্য এলাকা। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি তথা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘পথে পথে বিজয়’ শিরোনামে ২১টি এলাকায় সমাবেশের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তার একটি অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ অংশ নেন। ‘বিজয়ের গল্পগুলো পুনরায় বলা, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে পুনরায় জানা এবং সম্মান প্রদর্শন করা, যুদ্ধের অসাধারণ গল্পগুলো উপভোগ করা, তরুণদের যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া, সবাইকে এই বিজয় দিবসের বিশালতা উপলব্ধি করা, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঝিনাইদহ জেলাসহ দেশব্যাপী উদযাপন করা।
×