ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুম্বাই হামলার বার্ষিকীতে বেদনাবিধুর ফিরে দেখা

পাকিস্তানী জঙ্গীবাদের নিষ্ঠুর থাবা, ভয়াল স্মৃতি

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৮ নভেম্বর ২০২১

পাকিস্তানী জঙ্গীবাদের নিষ্ঠুর থাবা, ভয়াল স্মৃতি

মোরসালিন মিজান ॥ শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনী মানেই একটা চমৎকার অনুভূতি। শৈল্পিক পরিভ্রমণ। জাতীয় চিত্রশালায় সাজিয়ে রাখা চিত্রকর্ম বা আলোকচিত্র ঘুরে দেখতে দেখতে মন ভাল হয়ে যায়। অথচ একই স্থানে বর্তমানে চলমান একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখে গা শিউরে উঠছে। হ্যাঁ, ছবি দিয়েই সাজানো দেয়াল। তবে প্রায় সব ছবিতে রক্ত, বোমায় ছিন্ন ভিন্ন শরীর, দাউ দাউ আগুন, আগুনে পুড়ে ছাই ভস্ম হয়ে যাওয়া মানবদেহ, আহতের আর্তচিৎকার, জীবিত স্বজনের চোখের জল। বোবা কান্না। শিল্প এখানে নেই। ছবিগুলো বাস্তব ঘটনার ধারাবিবরণী। প্রদর্শনীর কিছু ছবি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের। কিছু বাংলাদেশের ছবি। আলাদা দুই দেশের ছবি হলেও, এক জায়গায় ভীষণ মিল। উভয় দেশই কোন না কোনভাবে পাকিস্তানী জঙ্গীবাদের শিকার। মূলত এ জায়গা থেকেই কিছু বলার চেষ্টা করছে প্রদর্শনীটি। বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সহযোগিতায় বিশেষ প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি। ৬ নম্বর গ্যালারিজুড়ে এখন বীভৎস ফিরে দেখা। প্রথমেই চোখে পড়ে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ছবি। ২০০৮ সালের ২৬ নবেম্বর সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ে তাজ হোটেল ও ছত্রপতি শিবাজি রেলওয়ে স্টেশনসহ প্রায় ১২টি স্থাপনায় একযোগে সন্ত্রাসী হামলা হয়। হামলায় ১৬৬ জনের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন বহু মানুষ। আহত ও নিহতদের মধ্যে ভারতীয়রা ছাড়াও কমপক্ষে ২২ দেশের নাগরিক ছিলেন বলে জানা যায়। গত শুক্রবার ছিল হামলার ১৩তম বার্ষিকী। মূলত এ উপলক্ষেই প্রদর্শনীর আয়োজন। একাধিক আলোকচিত্রে জ্বলতে থাকা তাজ হোটেল। ধোঁয়ার কু-লি। বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যাওয়া চারপাশ। রক্তে ভেসে যাওয়া মেঝে। ক্ষত-বিক্ষত দেহ। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের ছোটাছুটি। যারা মুম্বাই হামলা সম্পর্কে অবগত নন তাদের কাছে ছবিগুলোকে এ্যাকশন সিনেমার পোস্টার, প্রচারপত্র বলে মনে হতে পারে। এমনকি যারা পত্রপত্রিকায় টেলিভিশনে এসব ছবি আগেই দেখেছেন তাদেরও বিশ্বাস করতে নিশ্চিত কষ্ট হবে। তবে ভারতীয়রা দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারবেন না কোনদিন। প্রদর্শনীতে পাকিস্তানের হাফিজ সাঈদের ছবি রেখে তাকেই হামলার মূল চক্রান্তকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া ওন্ট ফরগিভ দ্য কনভিক্টস অব ৬/১১। ফরগিভ, নো। ফরগেট নেভার।’ বাংলাদেশ অংশের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে একেবারে ১৯৭১ সাল থেকে। আয়োজকরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের নৃশংসতার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। বলার চেষ্টা করেছেন, পাকিস্তানের মদদে সেই তখন থেকেই এরা বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। কখনও জামায়াত-শিবির, কখনও হরকাতুল জিহাদ, কখনও হেফাজতে ইসলাম নামে উগ্রবাদ প্রদর্শন করেছে। করছে। গোলাম আযম নিজামী ‘বাংলা ভাই’ বা মামুনুল হক নামেও সামনে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। পাকিস্তানী মদদেই বাংলাদেশবিরোধী নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। একই গোষ্ঠী ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল। এই মৃত্যুগুলো আবারও ছবিতে দেখে ভেতরটা হু হু করে ওঠে। এত বড় পাপ মানু করতে পারে? নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। পাশাপাশি মৌলবাদ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জোর তাগিদ দেয় প্রদর্শনীর ছবিগুলো। আলোকচিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও শাহরিয়ার কবিরের জিহাদত্রয়ী প্রামাণ্যচিত্রের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য ‘বাংলাদেশ কোন পথে’ ও ‘জিহাদের প্রতিকৃতি দেখানো হচ্ছে গ্যালারিতে।’ শুক্রবার শুরু হওয়া প্রদর্শনী আজ শেষ হবে।
×