ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্র ভয়াবহ

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৮ নভেম্বর ২০২১

চিত্র ভয়াবহ

পরপর দুইদিন সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবহী গাড়ির চাপায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। বুধবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা সিটি কপ্লেক্সের সামনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করেন সংবাদকর্মী আহসান কবির খান। আগেও এ ধরনের গাড়িতে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। চলতি বছরের মার্চে ডিএসসিসির ময়লাবাহী গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। এপ্রিলে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন রিক্সাচালক মোস্তফা। গত পাঁচ বছরে ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নিহত হয়েছে ২৭ জন। রাস্তায় ময়লাবাহী গাড়ির বেপরোয়া চলাচল নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এসব গাড়িতে কেন এত দুর্ঘটনা ঘটছে? কারা চালাচ্ছে এসব গাড়ি? সংবাদ অনুযায়ী গুলিস্তানের ঘটনায় দক্ষিণ সিটির গাড়ির চালক ছিল মাস্টাররোলের ক্লিনার। উত্তর সিটির গাড়িটি চালাচ্ছিলেন একজন বহিরাগত। ডিএসসিসির ৩৩৭টি ভারি যানবাহনের বিপরীতে চালক রয়েছে ৮৬ জন। ডিএনসিসির বর্জ্যবাহী ১৩৭টি ভারি যানবাহনের বিপরীতে চালক রয়েছে ৪১ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন মাস্টাররোলে। প্রশ্ন হচ্ছে, গাড়িগুলো চালাচ্ছে কারা? এসব গাড়ির চালক বহিরাগত, মশককর্মী, মালী, ক্লিনার, সুইপার, এমএলএসএস পদধারী ও বহিরাগত। তাদের ভারি বা হাল্কা যানবাহন কোনটিই চালানোর লাইসেন্স নেই। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া স্টিয়ারিং ধরা শিখেই তারা ডাম্প ট্রাক, কম্প্যাক্টর বা পে-লোডারের মতো ভারি যানবাহন চালাচ্ছে। তাদের দিয়েই দিনের পর দিন চালানো হচ্ছে অসংখ্য ভারি যানবাহন। অথচ সরকারী যানবাহন (ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ১৯৮৬-তে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, কোন কর্মকর্তার জন্য বা কোন প্রয়োজনে ব্যবহৃত গাড়ি শুধু ওই চালকই চালাতে পারবে। এমনকি কোন কর্মকর্তা তার নামে বরাদ্দকৃত গাড়ি নিজে বা পরিবারের কোন সদস্যও চালাতে পারবেন না। ২০১৬ সালে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য প্রণীত অর্গানোগ্রামে গাড়ি চালকের পদ আছে ৩০৬টি করে। এর মধ্যে ২১৫টি ভারি এবং ৯১টি হাল্কা যানচালক। সিটি কর্পোরেশন চাইলেও এর চেয়ে বেশি চালক নিয়োগ দিতে পারে না। অতিরিক্ত গাড়ি চালানোর জন্য মাস্টাররোলে নিয়োগ দিতে হয়। দুই সিটিতেই রয়েছে গাড়ি চালকদের ইউনিয়ন। নেতাদের দু-একজন ছাড়া কেউ গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেন না। এছাড়া অনেক প্রভাবশালী চালকই নিজেরা গাড়ি চালান না। তারা বহিরাগতদের সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকায় গাড়ি চালানোর চুক্তি করেন। নিজেরা বেতন ও ওভারটাইম নিয়ে ইউনিয়নের রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যবসায় সময় দেন। পরপর দুটি মৃত্যুতে টনক নড়েছে দুই সিটির। তারা অভিযুক্ত ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বহিরাগত কিংবা কর্পোরেশনের শ্রমিকদের গাড়ি চালানো নিয়ে কোন দায়বদ্ধতা নেই। ফলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় তারা। তাদের দিয়ে গাড়ি চালালে এমন দুর্ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। অবিলম্বে দুই সিটির গাড়ি চালানোর এই পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে গাড়ি চালানোর আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে আরও বড় কোন দুর্ঘটনা অপেক্ষা করছে আগামীতে।
×