ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

স্তন ক্যান্সারে ভয় নয় সচেতনতা জরুরি

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২৭ নভেম্বর ২০২১

স্তন ক্যান্সারে ভয় নয় সচেতনতা জরুরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ক্যান্সার নির্ণয় তথা ক্যান্সার স্ক্রিনিং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। এমন অবস্থা স্তন ক্যান্সার নিয়ে ভয় নয় বরং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এই রোগে সচেতনতার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করছেন তারা। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে মাসব্যাপী স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচীর মূল্যায়ন ও সুপারিশ উপস্থাপন ও এর উপর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ও আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, এমনিতে নারীদের স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার স্ক্রিনিং আমাদের দেশে কাঙ্খিত সফলতা পায়নি নানাবিধ কারণে। এমতাবস্থায় গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের অন্তর্ভূক্ত ১৭টি সংগঠন ও রোটারির ৪১টি ক্লাব মিলে ১০ অক্টোবর ৯ম বারের মতো সারাদেশে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন ও মাসব্যাপী সচেতনতা ও ফ্রি স্ক্রিনিং কর্মসূচীর আয়োজন করে। প্রত্যাশার বেশি সাড়া এবং স্ক্রিনিং সেবায় গুণগত উত্তরণের পাশাপাশি এর সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ ও এর প্রেক্ষিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় এ অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মো: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ ও রোটারি জেলা ৩২৮১ এর গবর্নর ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল আলোচক হিসেবে বিশিষ্ট গাইনি অনকোলজিষ্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. স্বপন বন্দোপাধ্যায় বক্তব্য রাখেন। এসময় ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, জাতীয়ভাবে স্তন, জরায়ু ও মুখগহ্বর ক্যান্সার রোধে কর্মসূচি প্রয়োজন। নারীদের পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদেরও এ রোগে সচেতনতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও তার আওতায় প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, স্ক্রিনিং, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবী। সরকারের পাশাপাশি অলাভজনক অনেক উদ্যোগ দরকার ক্যান্সার সচেতনতা ও স্ক্রিনিং এর জন্য। হাসপাতাল স্থাপন করতে আগ্রহ অনেকের থাকলেও প্রতিরোধ ও স্ক্রিনিং এর সমাজভিত্তিক কর্মসূচি পরিচালনায় আগ্রহ কম। তিনি দেশের বিত্তবান মানুষদের প্রতি আহবান জানিয়ে ক্যান্সার রোগীদের জন্য অলাভজনক ও সমন্বিত ক্যান্সার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ডা. রাসকিন বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে বিত্তবান মানুষরা এ ধরণের প্রতিষ্ঠান করে অসহায় মানুষদের সেবায় এসেছেন ও ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। আমাদের দেশে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার উদ্যোগে মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার রেডিওথেরাপি মেশিন প্রথম চালু হয়। এসময় ব জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, রোটারি সারা বিশ্বে পোলিও নির্মূলসহ স্বাস্থ্য সেবায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় রোটারির অগ্রনী ভুমিকা ছিলো। তাই রোটারি নেতাদের কাছে অনুরোধ, অস্বচ্ছল ও অসহায় ক্যান্সার রোগীদের জন্য এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন, যেখানে সাশ্রয়ী ও প্রয়োজনে বিনা খরচে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত থাকবে। অনুষ্ঠানে স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ৫ জন নারী সাংবাদিক, ৩ জন ক্যান্সার সার্ভাইভার, ২ জন সংগঠক ও সরকারি বেসরকারি ৫টি সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে কৃতজ্ঞতা স্মারক প্রদান করা হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী, সিসিপিআর-এর নির্বাহী পরিচালক মোসাররত জাহান সৌরভ, সাংবাদিক নাদিরা কিরন, শাহনাজ শারমিন, শাহনাজ পলি, বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএ’র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনিষা সরকার, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাকিয়া নাজনীন পান্না।
×