ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাটের প্যাড

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০২১

পাটের প্যাড

পাটের স্যানিটারি প্যাড উদ্ভাবনে বাংলাদেশের গবেষক ফারহানা সুলতানা পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবির সহকারী বিজ্ঞানী। স্যানিটারি প্যাডের নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য চতুর্থ ইনোভেশন পিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এমন অনন্য সম্মানে ভূষিত হলেন। কিশোরীরা জীবনের স্পর্শকাতর অনুভবে মাসের কয়েকটা দিন অস্বস্তিতে কাটায়। তাদের জন্য এটি প্রথমে চমক এবং বিব্রতকর। লজ্জা আর সঙ্কোচে তারা নিজের মায়ের সঙ্গেও আলাপ করতে চায় না। এই সময় তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি অপরিহার্য। এক সময় পরিষ্কার নরম কাপড়ে মেয়েরা তাদের বিব্রতকর সময় কাটিয়ে দিত। এটি খুব স্বাস্থ্যকর ছিল না। সময় পাল্টেছে। যৌক্তিক আবেদনে মানুষের প্রতিদিনের চাহিদায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবন। প্রতি মাসে অস্বস্তিকর সময়ে আধুনিক প্যাড হাতে আসা তাদের জন্য বড় পাওয়া। স্বস্তি ও আরামদায়ক প্যাড শুধু স্বাস্থ্যসম্মতই নয় বরং স্বাভাবিক জীবনে থাকারও অনন্য ব্যবস্থা। এখন স্যানিটারি প্যাড মেয়েদের কষ্টকর সময়কে অনেকখানি সহজ করেছে, স্বস্তিতে এনেছে। আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা এই প্যাডের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। চতুর্থ ইনোভেশন পিস প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড পুরস্কার অর্জন করেছেন বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী। বিশেষ সময় মেয়েদের এই প্যাড কিনতে গিয়েও নানা বিপত্তিতে পড়তে হয়। রক্ষণশীল সমাজে এই সব বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনাও করা যায় না। প্যাড কিনতে বাইরে যাওয়া এক বিব্রতকর অবস্থা। অস্বস্তিকর হলেও এটাই নারীদের এক অকৃত্রিম সম্ভার। মাতৃত্বের শক্তিময়তায় দিনে দিনে নিজেকে তৈরি করা অপরিহার্য প্রাকৃতিক নিয়ম। নিয়মবিধির এই গতিপ্রকৃতিই নারীদের মাতৃশৌর্যের চমৎকার অভিযোজন। সঙ্গতকারণে নারী শরীরের এই স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি সন্তান ধারণের সক্ষমতাকে করে সুসংহত। আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন এ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ) এই বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এবারের আয়োজনের মূল বার্তাই ছিল- ‘মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্ব সম্প্রদায়।’ গত দুই বছর ধরে করোনার লাগাতার সংক্রমণে বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীত প্রক্রিয়ায় বিশ্বময় উষ্ণতার দাপটে সৃষ্টি হচ্ছে নানা স্বাস্থ্য সঙ্কট। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সবার আগে বিবেচিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় নারীদের প্রতিমাসের অস্বস্তিকর সময় পার করার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য নিয়ম অনুসরণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই কারণে স্যানিটারি প্যাডের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। নতুন আবিষ্কৃত প্যাডটি যেন বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রসারিত করা যায়। মূল্যও যাতে সাশ্রয়ী থাকে। সিংহভাগ নারী সেটা কিনতে যেন কোন সমস্যায় না পড়েন। ফারহানা সুলতানা মূলত ম্যানুয়্যালি পাটের সেলুলোজভিত্তিক ডিসপোজেবল প্যাড তৈরি করে এর ওপর গবেষণা পরিচালনায় সম্পৃক্ত হন। পাটের সেলুলোজ একটি নতুন উপাদান। দেশে এই প্যাড তৈরির কোন মেশিন এখন পর্যন্ত নেই। সুতরাং ফারহানা পুরস্কারের অর্থ নিয়ে আরও গবেষণা চালাবেন। অধিক সংখ্যক প্যাড উৎপাদনে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করবেন। যার জন্য একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও জরুরী। নিজের সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্যাডের বর্জ্য অপসারণেও নজরদারি বাড়াবেন এটি সবার কাম্য।
×