ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি

থার্ড টার্মিনাল কর্মীদের বেতন না দেয়ায় কঠোর হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ২৭ নভেম্বর ২০২১

থার্ড টার্মিনাল কর্মীদের বেতন না দেয়ায় কঠোর হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে গড়িমসি করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প পরিচালক। বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ প্রকাশকারী একদল শ্রমিকের টাকা সময় মতো কেন পরিশোধ করা হয়নি সে জন্য ব্যাখা চেয়ে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম শুক্রবার দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিষয়টি বিব্রতকর হওয়ায় এখন এডিসির কাছেই ব্যাখ্যা চাইতে হচ্ছে। তারা চাইবে কনকর্ডের কাছে। এ ধরনের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়া বা মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ শ্রমিকরা বেতন-ভাতা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন। এ অবস্থায় কোন সুরাহা না হওয়ায় সঠিক সময়ে বেতন-ভাতাদির দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। হঠাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই তারা কাজ বন্ধ রেখে ভিআইপি টার্মিনালের সীমানা প্রাচীর এবং থার্ড টার্মিনালের রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি, ছুটির দিন শুক্রবার সকালেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। কনকর্ড গ্রুপের শতাধিক শ্রমিক রাস্তা অবরোধের ফলে এদিনও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানানো হয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমানবন্দর পরিচালকের কাছে। এ সঙ্কট নিরসনে শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষপটে শুক্রবার সকালে কনকর্ড গ্রুপ এবং এসওএস কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান ও থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম। ওই বৈঠকে শ্রমিকদের অসন্তোষের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেবিচক। এ সময় সার্বক্ষণিক শ্রমিকদের অভিযোগ জানার জন্য প্রকল্প এলকায় বেবিচকের প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে মত দেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক। এতে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে কনকর্ড গ্রুপের প্রতিনিধিরা জানান, প্রতি মাসের ২ তারিখের মধ্যে তারা টাকা পরিশোধ করবে। এসওএস শ্রমিকদের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগ আর আসবে না বলেও নিশ্চিত করা হয় কনকর্ডের পক্ষ থেকে। জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন- এটা অনাকাক্সিক্ষত। এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন নিয়ে অসন্তোষ অনাকাক্সিক্ষত। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেকে সতর্ক করছি, তারা যেন সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় বেবিচকের প্রতিনিধি থাকবেন। তারা সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। শ্রমিকদের কোন অভিযোগ থাকলে তা জেনে ব্যবস্থা নেবেন। থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা শুরু থেকেই নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পায়নি। কনকর্ড গ্রুপ প্রতি মাসের ১ তারিখের পরিবর্তে ২৫ তারিখের দিকে তাদের বেতন দেয়। এ নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল তাদের। বিগত কয়েক মাসে ২৫ তারিখেও বেতন দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। গেল সেপ্টেম্বর মাসের বেতন দেয়া হয় অক্টোবর মাসে ২৭ তারিখে। বৃহস্পতিবার অক্টোবর মাসের বেতন নিতে গেলে শ্রমিকদের জানানো হয়, পুরো মাসের পরিবর্তে অর্ধেক মাসের বেতন দেয়া হবে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। বকেয়া বেতনের দাবিতে ভিভিআইপি টার্মিনালের সীমানা প্রাচীর ও থার্ড টার্মিনালের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন তারা। হাসিম নামের এক শ্রমিক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখনও দুই মাসের বেতন পাব। সেখানে এক মাসের অর্ধেক দিতে চাচ্ছে। এটা কিভাবে মানব। এখানে অনেক অনিয়ম। চাকরিতে ঢুকলে ফোরম্যান, সুপারভাইজার, অফিসের কর্মকর্তা সবাই টাকা নেয়। এক একজনের কাছে থেকে ১৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত টাকা নেয়া হয়। প্রতিদিন লোক ঢুকে প্রতিদিন লোক চলে যায়। বেতন যেহেতু পরের মাসের ২৫ তারিখের পরে দেয়। এ কারণে চাকরি ছেড়ে গেলে ১ মাসের বেতন আর দেয় না। কোম্পানি খাবার খরচ বাবদ প্রতি মাসে চার হাজার টাকা কেটে নেয়। খাবারের মান একেবারে খারাপ। কেউ যদি সেই খাবার খেতে না চান, তাহলে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদন পাস হতে হতে না খেলেও এক মাসের টাকা কাটে। পিপিই, হেলমেট, জুতা, সেফটি ভেস্ট বাবদ দুই হাজার টাকা কেটে রাখা হয়। অথচ এ সব সুরক্ষাসামগ্রী কোম্পানির দেয়ার কথা। এ ধরনের আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, সাড়ে একুশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিটসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসাং, কনসোর্টিয়াম এভিয়েশন ও ঢাকা কনসোর্টিয়াম। মূল নির্মাতা এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম হলেও তাদের অধীনে একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে কনকর্ড গ্রুপও। কনকর্ড গ্রুপ এসওএস কোম্পানির মাধ্যমে জনবল সংগ্রহ করে। আবার এসওএস গ্রুপ আরেক দু’নম্বরি কোম্পানির মাধ্যমে জনবল সংগ্রহ করে। অভিযোগ রয়েছে কনকর্ড এসওএস কোম্পানি টাকার বিনিময়ে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। একুশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে শ্রমিকরা কেন সঠিক সময়ে বেতন-ভাতাদি পাবে না প্রশ্ন করা হলে প্রকল্প পরিচালক একেএ মাকসুদুল ইসলাম বলেন, আসলে আমরা কাজ দিয়েছি এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামকে (এডিসি)। তারা সাবকন্ট্রাক্ট দিয়েছে কনকর্ডকে। এভাবে আরও কয়েক হাত হয়ে সাবকন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে জনবল সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজ। এ জন্য আমরা ধরব এডিসিকেই।
×