ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে ভাল খেলার আশা টাইগারদের

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৬ নভেম্বর ২০২১

টেস্টে ভাল খেলার আশা টাইগারদের

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ সাগরিকা একটা সময় পয়মন্ত ভেন্যু ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। কিন্তু সর্বশেষ দুই টেস্টে এই ভেন্যুতে হার দেখতে হয়েছে। নবাগত টেস্ট সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ ও এ বছর ফেব্রুয়ারিতে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। সেই ভেন্যুতে এবার ‘নতুন চেহারার’ টেস্ট দল নিয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে সাড়ে ৯ মাস পর আজ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। এই মাঠে একেবারেই অপরিচিত পাকিস্তানের বর্তমান দলটি। কারণ ২০১১ সালের পর সাগরিকায় কোন ম্যাচ খেলেনি পাকরা। তাই মাত্র দুই দিনের অনুশীলন থেকে যতটা সম্ভব ঝালিয়ে নিয়েছে তারা স্বাগতিকদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। তবে চলতি সফরে টি২০ সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করা এবং টেস্ট দল হিসেবেও স্বাগতিকদের শক্তি খর্ব হওয়ায় জয়ের লক্ষ্যেই নামবে পাকরা। টানা ৯ টেস্ট হেরে যাওয়ার পর গত জুলাইয়ে জিম্বাবুইয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে জয়ের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। এরপর গত কয়েক মাস ধরে শুধু টি২০ ফরমেটেই খেলেছে। এই লম্বা বিরতির পর আবার টেস্টে ফিরছে বাংলাদেশ প্রায় নতুন চেহারা নিয়ে। কারণ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ব্যতীত সিনিয়র আর কোন ক্রিকেটার নেই। বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে নেই। ইনজুরির ধাক্কায় ছিটকে গেছেন গতিময় পেসার তাসকিন আহমেদ এবং দুই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। এছাড়াও অবসর নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাই ব্যাটিং লাইনআপের শক্তিমত্তা অনেকখানিই কমে গেছে। এখন বাংলাদেশ দলকে ব্যাটিংয়ে পুরোপুরিই ভরসা করতে হবে মুশফিক ও মুমিনুলের ওপর। সাইফ হাসান তেমন ফর্মে না থাকায় আজ অভিষেক ঘটতে পারে যুব বিশ^কাপজয়ী দলের টপঅর্ডার মাহমুদুল হাসান জয়। সে ক্ষেত্রে দুই বাঁহাতিকে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে আজ। ওয়ানডাউনে খেলবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মুশফিক-মুমিনুলের পাশাপাশি শান্তর ওপরেও ভরসা করবে বাংলাদেশ। কারণ সর্বশেষ ৩ টেস্টে তার আছে দুই সেঞ্চুরি। আর সম্প্রতি তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও শতক হাঁকিয়েছেন। সাগরিকার এই ভেন্যুতে মূলত বাংলাদেশের স্পিনাররাই সুবিধা পেয়ে থাকে। আর যেহেতু বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে তাই স্পিনারদের ওপরই ভরসা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা হবে সাকিবের অনুপস্থিতি। তাই একাই বাঁহাতি স্পিনের দায়িত্বটা কাঁধে নিতে হবে তাইজুল ইসলামকে। তার সঙ্গে অফস্পিনে থাকবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ঘরের মাটিতে সর্বশেষ কয়েক টেস্টের একাদশে একজন পেসার নিয়েই অধিকাংশ সময় খেলেছে বাংলাদেশ দল। এবারও তেমন কিছু দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না। সে ক্ষেত্রে একমাত্র পেসার হিসেবে এবাদত হোসেন চৌধুরী বা আবু জায়েদ রাহীর মধ্যে কেউ খেলতে পারেন। তখন ৭ জন ব্যাটার নিয়ে তাইজুল-মিরাজের পাশাপাশি একাদশে আসতে পারেন আরেক অফস্পিনার নাঈম হাসান। দুই পেসার খেললে নাঈমের পরিবর্তে আরেকজন পেসার দেখা যেতে পারে। ব্যাটিংয়ে গভীরতা বাড়ানোর জন্য ইয়াসির আলী রাব্বিকেও অভিষেক ক্যাপ দেয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশের একাদশ হতে পারে- সাদমান, জয়, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, লিটন দাস, মিরাজ, নাঈম/ইয়াসির, তাইজুল, এবাদত ও রাহী। সম্প্রতি ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে রানের খরায় থাকা লিটন অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে বেশ ফর্মেই আছেন। তাই কিপিং গ্লাভস তার হাতেই থাকছে। চলতি বছর বাংলাদেশ দল খেলেছে মাত্র ৫টি। ফলাফল হচ্ছে- ৩ হার, ১ জয় ও ১ ড্র। সর্বশেষ টেস্ট জেতার কারণে কিছুটা ভারমুক্ত হয়ে নামার সুযোগ হয়তো থাকত অধিনায়ক মুমিনুলের জন্য, কিন্তু বেশ কয়েকজন নিয়মিত ক্রিকেটার না থাকায় পাকদের বিপক্ষে লড়াই জমিয়ে তোলার রসদ পাওয়াই হবে কঠিন। কারণ, সর্বশেষ ৫ টেস্টের ৪টিতেই জিতেছে পাকরা। ২ দিন সাগরিকায় অনুশীলন করেছে তারা। মূলত ব্যাটিংয়েই মনোযোগ দিয়েছে তারা। ম্যাচের আগের দিনই (বৃহস্পতিবার) প্রথম টেস্টের জন্য ১২ জনের দল দিয়েছে তারা। সেই দলটিতে আছেন- অধিনায়ক বাবর আজম, উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান, আব্দুল্লাহ শফিক, আবিদ আলী, আজহার আলী, ফাহিম আশরাফ, ফাওয়াদ আলম, হাসান আলী, ইমাম-উল-হক, নওমান আলী, সাজিদ খান ও শাহীন শাহ আফ্রিদি। এখান থেকে একজন ব্যাটারকে বাদ দিয়েই একাদশ সাজানোর সম্ভাবনা রয়েছে পাকদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ টেস্ট খেলে ১০টিতেই জয় পেয়েছে পাকরা। একটিমাত্র ড্র আছে বাংলাদেশের খুলনায় ২০১৫ সালে। আর সাগরিকায় ২০১১ সালে সর্বশেষ যে টেস্ট খেলেছে তারা সেই ম্যাচে জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে। সব মিলিয়ে তাই এবারও চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়েই থাকবে পাকরা। এই টেস্টে এক চতুর্থাংশ দর্শক উপস্থিত হতে পারবেন মুমিনুলদের সমর্থন দেয়ার জন্য। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে হওয়া ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্টে ছিলেন না কোন দর্শক। এবার দর্শক ফিরছেন। তবে সীমিত পরিসরে দুই ডোজ করোনা ভ্যাকসিন নেয়া দর্শকরাই ঢুকতে পারবেন মাঠে।
×