ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর প্রথম ভাসানচর গেল আরও ৩৭৯ রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৬ নভেম্বর ২০২১

জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর প্রথম ভাসানচর গেল আরও ৩৭৯ রোহিঙ্গা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত বসবাসের জন্য স্বেচ্ছায় ভাসানচরকে বেছে নিল আরও ৩৭৯ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে তারা নতুন আশ্রয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ নিয়ে সাত দফায় ভাসানচরে স্থানান্তরিত হলো প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের সংস্থা ভাসানচরে যুক্ত হওয়ায় আরও রোহিঙ্গা নিজ ইচ্ছায় ভাসানচরে যাবে, এমনই আশা করছেন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বোটক্লাব থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি জাহাজ যাত্রা করে ভাসানচরের উদ্দেশে। এটি ছিল সপ্তম দফায় স্থানান্তর। আগের নিয়ম অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের টেকনাফ থেকে এনে প্রথমে রাখা হয় বিএএফ শাহীন কলেজের মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে। আগের দিনই তাদের আনা হয় চট্টগ্রামে। এর আগে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে এনে রাখা হয়েছিল উখিয়ার ডিগ্রী কলেজ মাঠের ক্যাম্পে। ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে আসা রোহিঙ্গারা সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে জাহাজে ওঠে। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা তদারকিতে ছিলেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। বিকেলের মধ্যেই তারা পৌঁছে যায় ভাসানচরে। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রথমে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর ওয়্যার হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদের ব্রিফ করেন নৌবাহিনী এবং প্রত্যাবাসনবিষয়ক কর্মকর্তারা। এ দিনই তারা উঠে যায় তাদের জন্য নির্ধারিত আবাসস্থলে। ভাসানচরে নেমেই রোহিঙ্গারা পায় মুক্ত আলো-হাওয়া। টেকনাফের কুতুপালংয়ে যেখানে ঘিঞ্জি পরিবেশ, এখানে তার উল্টো। শিশুরা জাহাজ থেকে নেমেই ছুটাছুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেখানেও রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় খাবার। নতুন পরিবেশে বসবাসের জন্য এই ৩৭৯ রোহিঙ্গা খুঁজে পেয়েছে সুপরিসর আশ্রয়। চট্টগ্রাম বোটক্লাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোজাম্মেল হক বলেন, ভাসানচর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব এবং অপপ্রচার ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআরসহ প্রায় সকল সংস্থাই সন্তোষ প্রকাশ করেছে সেখানে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ ও পরিবেশ নিয়ে। এতে করে রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আস্থা ফিরেছে। এখন অনেকেই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী। ভাসানচরে গড়ে তোলা আশ্রয়ণে প্রায় একলাখ রোহিঙ্গাকে রাখার ব্যবস্থা আছে বলে জানান নৌবাহিনীর এই দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ভাসানচরে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর এটাই প্রথম রোহিঙ্গা স্থানান্তর। এর আগে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় স্থানান্তরিত হয় ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৮০৪, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় ৩ হাজার ২৪২, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় ৩ হাজার ১৮, ৩ ও ৪ মার্চ পঞ্চম দফায় ৪ হাজার ২১ এবং ১ ও ২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ৪ হাজার ৩৭২ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে স্থানান্তরিত হয়। এ ছাড়া জলপথে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাবার সময় ধরাপড়া আরও ৩০৬ রোহিঙ্গা আগে থেকেই ভাসানচরে অবস্থান করছিল। নোয়াখালী থেকে গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ জানান, নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, এবারে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের যাত্রা অন্যবারের চাইতে আরও বেশি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় সরকার এই যাত্রাতে নজরদারি আরও বৃদ্ধি করেছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে নিবিড়ভাবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কার্যক্রম ও ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন ক্যাম্পসংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভাসানচরে আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যাম্প ইনচার্জগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে গেছেন। নবেম্বরের শুরু থেকে ভাসানচর গমনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ও ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের শিকার হওয়ার পর এই কার্যক্রমটি প্রথমে কিছুটা থমকে যায়। তারপরও জাতিসংঘের সহযোগিতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফের শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হবে।
×