স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র একদিনের ব্যবধান। আবারও সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় আহসান কবীর খান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারালেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির চাপায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন একটি জাতীয় পত্রিকার পেস্টিং বিভাগে কাজ করেন। সাত বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রিন্টিং ব্যবসা করছিলেন। এ ঘটনায় ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নিহতের পরিবারের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা সেখানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। অবরোধের ফলে সেখান রাস্তার উভয়পাশে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। শত শত প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন সারি সারি ঠায় দাঁড়িয়েছিল। পরে পুলিশের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আধা ঘণ্টা পর তারা সড়ক থেকে সরে যান। ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার স্বজনরা। সেখানে স্বজনের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভীন রেখা জানান, স্বামী আহসান কবীর বেলা ১১টায় নাস্তা খেয়ে মোহাম্মদপুর ও উত্তরা যাবেন বলে মগবাজারের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। পরে খবর পেলাম তিনি আর নেই। এই কথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্বামী প্রথম আলোর প্রেসে ১৭ বছর চাকরি করেছেন। বর্তমানে সংবাদে গ্রাফিক্সে কাজ করছিলেন। দুই সন্তান নিয়ে তারা রাজধানীর মগবাজারে নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির সদর থানায়।
এর আগে বুধবার দুপুরে গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাইম হাসানের মৃত্যু হয় । এ ঘটনায় দু’দিন ধরে রাজধানী জুড়ে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করছেন। দক্ষিণের মেয়র তাপসের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন তুলে নেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ সাব্বির জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বসুন্ধরা সিটির সামনের অন্য সব যানবাহনের সঙ্গে উত্তর সিটির ময়লার গাড়িটি আটকে ছিল। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই ময়লার গাড়িটি সিগন্যালে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলে থাকা আহসান কবীর খান ছিটকে পড়েন। তিনি বাইকের পেছনে ছিলেন। এ সময় তার মাথার ওপর দিয়ে ময়লার গাড়ির চাকা চলে যায়। এরপর পেছন থেকে লোকজন ধাওয়া দেয় গাড়িটিকে। গ্রীনরোড সিগন্যাল পর্যন্ত গিয়ে চালক এবং তার সহযোগী গাড়ি সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মোটরসাইকেলে দু’জন ছিলেন। আরেকজন কোথায় পুলিশ তা বলতে পারছে না। পরে মাথা থেতলানো আহসান কবীর খানের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ এসে ময়লা বহন করা গাড়িটি সিগন্যালে থেকে অন্যস্থানে সরিয়ে নেয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানম-ি ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদ আহসান জানান, দুর্ঘটনার পর সাময়িক সময় ওই সড়কটি স্থানীয় লোকজন অবরোধ করে রেখেছিল। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সড়কের যান চলাচল বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট অসীম কুমার সূত্রধর জানান, ঘটনাটা ঘটেছে আড়াইটার দিকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তারা আর মোটরসাইকেলটি পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে দুজন ছিল। নিহত কবীরের মাথা থেতলে গেছে। তাকে খালি চোখে চেনার কোন উপায় নেই। তার কাছে থাকা পরিচয়পত্র থেকে তাকে শনাক্ত করা হয়। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র জানান, দুর্ঘটনার পর ময়লার গাড়িটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পালিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: