ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শারমিনের শতরান

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৬ নভেম্বর ২০২১

শারমিনের শতরান

ক্রিকেটের টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টাইগারদের পারফরমেন্স ছিল হতাশাজনক। এর মধ্যেই আলোর ঝলকানিতে উঠে এলো নারী ক্রিকেটার শারমিনের নাম। খেলাটি আন্তর্জাতিক পরিসরে না হলেও শারমিনের অভাবনীয় কৃতিত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রইল। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুধু শতক হাঁকিয়ে নয়, একেবারে অপরাজিত ছিলেন ১৩০ রানে। ম্যাচ জেতাই নয়, বরং ৫৩ রানে প্রতিপক্ষকে বেঁধে দিয়ে বড় ব্যবধানে হারানোও ছিল এক অসাধারণ সাফল্য। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নারী ক্রিকেটাররা খেলতে নামে। বিদেশের মাটিতে এমন এক চমৎকার ইনিংস উপহার দেয়া অবিস্মরণীয় নৈপুণ্য অবশ্যই। হারারের সানরাইজ স্পোর্টস ক্লাবে মঙ্গলবার ওপেনিংয়ে নেমে শারমিন ১১টি চার আর ১৪১ বলে ১৩০ করে বাংলাদেশের মর্যাদা যে মাত্রায় নিয়ে গেলেন, তা শুধু বিস্ময়মাখা মুগ্ধতা। এর আগে বাংলাদেশের মেয়েরা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাকিস্তানী নারী ক্রিকেটারদের হারিয়ে যে ফুরফুরে মেজাজে ছিল, সেটা আরও দুরন্ত বেগে যুক্তরাষ্ট্রকে নাজেহাল করে দেয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল যুক্তরাষ্ট্রকে বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে যে চমক তৈরি হয়েছে, তাও বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের এক অভিনব ক্রিকেট শৈলী। বাংলাদেশের জন্য জয়টা আসে ব্যাটে বলে অপ্রতিদ্বন্দ্বীর দারুণ পারদর্শিতায়। শারমিনের দল টসে হেরে আমন্ত্রণ পায় ব্যাটিংয়ের। উদ্বোধনী জুটিতে শারমিন ও মুর্শিদা তুলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে শারমিন তার সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংসটি খেলেন ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে স্বদেশের মাটিতে। ৫০ ওভারের ম্যাচে আরও একটি অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস ছিল শারমিনের। বাছাই পর্বে সুপার সিক্স শেষে শীর্ষ তিনটি দল পাবে ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ টিকিটের অসাধারণ সুযোগ। নিজের অনুভূতিতে শারমিন অভিমত দেন, এমন টুর্নামেন্টে খেলতে পারাটাই অনেক বড় পাওনা। তবে শতক পাওয়াটা যে কোন ব্যাটারের পক্ষে অসাধারণ এক অর্জন। শারমিনের ক্রিকেট ইতিহাসে ধারাবাহিক খেলা ছাড়াও মানসম্মত স্কোর করাও এক অনন্য দক্ষতা, যা কোন ক্রিকেটারকে গৌরবান্বিত করে। তেমন গৌরবের অংশীদার হয় নিজের প্রিয় মাতৃভূমিও। তবে শুধু ব্যাট হাতে নয়, বোলিংয়ে পারদর্শিতা দেখাতে পারাটাও ছিল নারী খেলোয়াড়দের চমৎকার নৈপুণ্য। যে কারণে প্রতিপক্ষ স্বল্প সময়ে ধরাশায়ী হয়ে যায়। বাংলাদেশের নারীরাও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেট, ফুটবল এক সময় নারীদের জন্য অবারিত ছিল না। সময়ের প্রয়োজনে, যুগের চাহিদায় নারীরা যখন ঘর থেকে বাইরে বের হয়, তখন অনেক বদ্ধ দরজা তাদের জন্য খুলে যেতেও সময় লাগেনি। সক্ষমতা আর পারদর্শিতায় নিজেদের সম্মানজনক জায়গা তৈরি করাও ছিল এক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। খেলা শুধু উৎসাহ আর উদ্দীপনা নয়, যোগ্যতার বিচারে নিজেদের প্রমাণ করাও বড় মাপের কৃতিত্ব। যা নারী-পুুরুষকে এগিয়ে নেয় সমানভাবে। দেশও তার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে দেরি করে না।
×