ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মনিরুল হক রনি

চাই সুষ্ঠু আইন

প্রকাশিত: ২১:২৪, ২৫ নভেম্বর ২০২১

চাই সুষ্ঠু আইন

ই-কমার্স বর্তমানে একটি উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত। বিশ্বজুড়ে এ খাতের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর বাজারের আকারও। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা ও বাজারের আকার উর্ধমুখী। এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে এখাতে। আর ই-ক্যাব এর মতে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং এ খাতের আকার ৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল নাগাদ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বৈশ্বিক বাজারেও বাংলাদেশের ই-কমার্স স্থান দখল করেছে। ই-কমার্স বাণিজ্যের বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬তম। এমন বিকাশমান অর্থনৈতিক খাতটি যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে আজ হুমকির মুখে। সাম্প্রতিক সময়ে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রাহকের ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা এ খাতকে কলঙ্কিত করেছে চরম মাত্রায়। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে আলেশা মার্ট। ইতিপূর্বে যুবক থেকে শুরু করে ডেসটিনি, ইউনিপে-টুও গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। সময়ের পরিক্রমায় পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল এক ও অভিন্ন। প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকি ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে সময়ের ব্যবধানে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় পুঁজি হল গ্রাহকের আস্থা। গ্রাহকেরা বারবার প্রতারিত হলেও ভিন্ন কৌশলে নিত্য নতুন আস্থার ফাঁদ পেতে গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের প্রতারণার কৌশল এত সূক্ষ্ম এবং চমকপ্রদ ছিল যে গ্রাহক তার আগের প্রতারণার কথা ভুলে গেছে নিমিষেই। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের এই আস্থাকে পুঁজি করেই দিনের-পর-দিন প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ই-কমার্স মানুষের জীবনযাত্রাকে করেছে অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। শুধু তাই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালের কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এবং নামসর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে এটি এখন বিতর্কিত। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক কোন আইন করা হয়নি আজও। যে কারণে কোন ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই চলছে হাজারও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এজন্য সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি আইনী কাঠামোর মধ্যে আনা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে সরকার ডিজিটাল কমার্স নির্দেশনা জারি করেছেন ঠিকই। কিন্তু এ খাতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এ নির্দেশনায়ই যথেষ্ট নয়। বরং দরকার একটি যুগোপযোগী ই-কমার্স আইন। প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করে এ খাতের সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচলিত পেমেন্ট সিস্টেমও ই-কমার্স বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা। কেননা ইউনিক এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পেমেন্ট সিস্টেম না থাকায় বারবার গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি ইউনিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। পাশাপাশি যেসব গ্রাহক তাদের টাকা হারিয়েছেন, সেগুলো উদ্ধার করার কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি ই-কমার্সকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, তবে এ খাতটি যে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাভার, ঢাকা থেকে
×