ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

বেড়েছে নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ২১:২২, ২৫ নভেম্বর ২০২১

বেড়েছে নারী নির্যাতন

আজ ২৫ নবেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। নারীর ওপর যে কোন ধরনের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এ দিনটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৫ নবেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬০ সালের ২৫ নবেম্বর লাতিন আমেরিকার ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ক্রজিলোর বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন চলাকালে শাসকচক্র প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাকেল নামের তিন বোনকে হত্যা করে। এই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৮১ সালে নাতিন আমেরিকার এক নারী-সম্মেলনে ২৫ নবেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার সম্মেলনে ২৫ নবেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ হিসেবে মেনে নেয়া হয়। কিন্তু জাতিসংঘ দিবসটিকে স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৫ নবেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিতও হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রায়। বাস্তব সত্য এটাই যে, বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, এবং সমাজ-সভ্যতার উন্নয়নে তাদের অবস্থান অনস্বীকার্য। তারপরও নারীরা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক দিয়ে এখনও পুরুষের সমকক্ষ নয়। অর্থাৎ এই নারীর কারণেই একটি সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়, পৃথিবীর আলো উপভোগ করতে পারে এবং একটি সুন্দর জীবনের সূচনা করে। প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন তার জীবনে কোন না কোন সময়ে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়। প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে দুজন স্বামী/বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজ লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খোলেন না। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে বিবিসি ও ইউএনএফপিএ প্রদত্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ পারিবারিক সহিংসতার শিকার। ঐ নারীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ প্রতিনিয়ত প্রহৃত হন, এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নির্যাতিত নারীর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এক-তৃতীয়াংশ নারী স্বামী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। নির্যাতনের ৫০ শতাংশ নারী ১৪ বছরের আগেই ধর্ষণের শিকার হন। এছাড়া এসিড নিক্ষেপ, আগুন দেয়া, সমাজচ্যুত করা, জোরপূর্বক তালাক দেয়া এগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে। মানব সভ্যতার পেছনে নারীর অবস্থানকে কোনভাবেই ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই। লাখ লাখ বছর আগে গুহাবাসী নারী-পুরুষ যৌথ প্রচেষ্টায় যে জীবন শুরু করেছিল তা ক্রমেই বিকশিত হয়ে আজকের সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভোগ্য পণ্য হিসেবে না দেখে তাকে তার সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। সকল অপমান হতে নারীকে মুক্ত করতে হবে। নারীরা প্রতিনিয়ত কোন না কোনভাবে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতিত নারীদের অধিকাংশই নীরবে নির্যাতন সহ্য করেন। এই নির্যাতন নারীর অগ্রগতির পথে একটি মারাত্মক হুমকি বা বাধা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কঠোর করা হয়েছে নির্যাতনবিরোধী আইন। নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার হচ্ছে দ্রুত বিচার আইনে। সামাজিকভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়ছে অপরাধী। এর পরও বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন। উন্নয়নের মহাসড়কে আগুয়ান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর আবদান অনস্বীকার্য। ভুলে গেলে চলবে না, মোট ভোটারের অর্ধেক নারী। নারীবান্ধব সমাজ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। নারীকে নিরাপদ পৃথিবী দাও, নারী তোমাদের দেবে ততোধিক বাসযোগ্য এক সমাজের নিশ্চয়তা। লেখক : সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×